লক্ষ্মী পুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে রয়েছে জেগে থাকার বার্তা? জানুন 'কোজাগরী'-র প্রকৃত অর্থ

অন্ধকার নগরীতে ব্রাহ্মণ-পত্নীর ঘরে আলো দেখে সেই বাড়িতেই আশীর্বাদ দিয়েছিলেন দেবী লক্ষ্মী। ধনদেবীকে তুষ্ট করতে প্রকৃতপক্ষে কী কী করা সবচেয়ে জরুরি, জানেন কি?

দশমী মিটতেই বাঙালির ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন। অতি যত্নে আলপনা আঁকছেন বাংলার ছেলেমেয়েরা। ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে মায়ের হাতের নাড়ু। কিন্তু, ধনদেবীকে তুষ্ট করতে প্রকৃতপক্ষে কী কী করা সবচেয়ে জরুরি, জানেন কি?

অন্ধকার রাতে পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদের আলোয় মানুষের ঘরে ঘরে উঁকি মেরে দেখেন দেবী লক্ষ্মী। কী দেখেন? তার পেছনেই লুকিয়ে আছে ‘কোজাগরী’ শব্দের অর্থ। কারণ, সেই পূর্ণিমাটি আসলে কোজাগরী পূর্ণিমা। ‘কো’ শব্দের অর্থ হল ‘কে’, আর ‘জাগর’ শব্দের অর্থ হল ‘জেগে’। কো এবং জাগরী মিলিয়ে মূল অর্থটি হল, কে জেগে আছ? ব্রতকথার গল্প অনুযায়ী, পূর্ণিমা রাত্রে দুখিনী রাজকন্যা তথা ব্রাহ্মণ-পত্নী পুষ্পবতী ঘরের কোণে একটুকরো টিমটিমে আলো জ্বালিয়ে মালা গাঁথছিল। সেই পথেই সাদা পেঁচার পিঠে চড়ে পুজো নিতে বেরিয়েছিলেন লক্ষ্মী। তাঁর চোখে ছিল সেই খোঁজ, ‘কে জেগে আছ?’, অন্ধকার নগরীতে ব্রাহ্মণ-পত্নীর ঘরে আলো দেখে সেই বাড়িতেই আশীর্বাদ দিয়েছিলেন ধনদেবী।

Latest Videos

সমস্ত পঞ্জিকা ও শাস্ত্র মতে, ‘আশ্বিনের পৌর্ণ‌মাস্যানতু চরেত জাগরণং নিশি’, অর্থাৎ, আশ্বিন মাসের (শুক্লপক্ষে) পূর্ণ চন্দ্রের দিন, অর্থাৎ পূর্ণিমার রাতে, রাত্রি জাগরণ করতে হবে। এর কারণ হিসেবে রচিত আছে সংস্কৃত শ্লোক, ‘লোকঃ বিভূতয়ে’, অর্থাৎ, বিভূতি লাভের উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ, ধন বা সমৃদ্ধি পাওয়ার আশায়। ‘কৌমদ্যাং পূজয়ে লক্ষ্মী’, অর্থাৎ, পূর্ণ চন্দ্র (‘কৌমুদী-র’) সময়ে লক্ষ্মী দেবীর পুজো করতে হবে। পুরাকালে অতি প্রচলিত কথা ছিল, ‘কৌমুদীতে জাগর’, অর্থাৎ, পূর্ণ চন্দ্রের রাতে জেগে থাকা। কবি কালিদাসের ‘রঘুনন্দন’ লক্ষ্মী সম্পর্কে বিবৃত করেছেন, ‘নিশীথে বরদালক্ষ্মী’, অর্থাৎ, দেবী রাত্রিবেলায় বরদা, অর্থাৎ, দানশীল হয়ে ওঠেন। 

কৌমুদী মহোৎসবের পুরাকথা অনুসারে, লক্ষ্মী দেবী বলছেন, ‘কো জাগরী, তস্মই বিত্তাং প্রগচ্ছামি’। অর্থাৎ, কে জেগে আছ? তাকেই আমি বিত্ত (সম্পদ) দেবো। তিনি আরও বলছেন, ‘অক্ষই ক্রীড়াং করতিজা’, অর্থাৎ, যারা ক্রীড়া, বা কর্মে নিযুক্ত রয়েছ, তাদের আমি ধন সম্পদ দেবো। লক্ষ্মীর পাঁচালি অনুসারে, ‘দিবানিদ্রা অনাচার ক্রোধ অহংকার আলস্য কলহ মিথ্যা ঘিরিছে সংসার’, এই পর্যায়ের পৃথিবী দেবীর একেবারেই অপছন্দ, যে সম্পর্কে তিনি অভিযোগ তুলেছেন নারদ মুনির কাছে। অর্থাৎ, আলস্য এবং অহংকারই মানুষের ধ্বংসের অন্তর্নিহিত কারণ, যা দেবীকে রুষ্ট করে।

তাই, আশ্বিনের শুক্লপক্ষে পূর্ণিমা রাতে স্নান করে পরিচ্ছন্ন কাপড়ে সুগন্ধ ভরা পরিবেশে পূজিতা হয়ে তুষ্ট হন দেবী লক্ষ্মী। বাংলার ঘরে ঘরে মাটির প্রতিমায় বা সরায় এঁকে তাঁর পুজো করে, আলপনা দিয়ে এবং ফল প্রসাদ নিবেদন করে প্রধানত নারীরা দেবীকে খুশি করার ব্রতে মতি হন, এভাবেই বঙ্গ দেশে আজও ভিন্ন নামে ও ভিন্ন রূপে প্রচলিত রয়েছে পুরাকালের কৌমুদী মহোৎসব।  

আরও পড়ুন-
হরিদেবপুরে নিখোঁজ যুবকের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার করা হল বান্ধবী এবং তাঁর মা ও ভাইকে
গতিপথ ঘোরানোর চেষ্টাই কি মাল নদীর বিপর্যয়ের কারণ, নাকি, এর পেছনে লুকিয়ে আরও ভয়ঙ্কর বিপদ?

Share this article
click me!

Latest Videos

Live: মথুরাপুরে সদস্যতা অভিযান অগ্নিমিত্রা পালের, দেখুন সরাসরি
Suvendu Adhikari Live: বিধানসভার বাইরে মুখোমুখি শুভেন্দু অধিকারী, দেখুন সরাসরি
'বালি চুরি, কয়লা চুরিতে যুক্ত পুলিশদের একাংশ' বিস্ফোরক মন্তব্য মমতার | Mamata Banerjee
উপনির্বাচনে (By Election) কেমন ফল করবে বিজেপি? দেখুন কী বললেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
হঠাৎ করে TMC নেতারা পুলিশের বিরুদ্ধে কেন? কী উদ্দেশ্যে? প্রশ্ন অগ্নিমিত্রার | Agnimitra Paul