কোথাও মকর, কোথাও সুকরাত, পৌষ সংক্রান্তির মাহাত্ম সব জায়গাতেই এক

  • গঙ্গাস্নান করে পুণ্য অর্জন করছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ
  • কাকভোর থেকেই শুরু হয়েছে পুণ্যস্নান
  • এই সময়ে ঘরে ঘরে নতুন ফসল ওঠে
  • কোথাও আরাধনা করা হয় মা লক্ষ্মীর

তপন মল্লিক, প্রতিবেদক-  যদিও অতিমারি করোনাকাল তবু সাগরসঙ্গম আজ সাধুসন্ত, পুণ্যকামী মানুষজনের ভিড়ে ঠাসা। কাকভোর থেকেই শুরু হয়েছে পুণ্যস্নান। শুধু গঙ্গাসাগর নয়, গঙ্গাতীরবর্তী সব শহর গ্রামেই লাখ লাখ মানুষ গঙ্গাস্নান করে পুণ্য অর্জন করছেন। ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের এই বিধান অনুযায়ী মকর সংক্রান্তিতে ‘গঙ্গাস্নান’ আবশ্যক। যেখানে গঙ্গা নেই, সেখানে স্থানীয় যে কোনও নদী, খাল, জলাশয়কে গঙ্গা ভেবে ডুব দেরে মন গঙ্গা বলে ডুব দিলেই পুণ্যার্জন হবে। সাধারণত ১৪ জানুয়ারি বা তার কাছাকাছি একটি দিনে পরে এই তিথি। বঙ্গাব্দ অনুযায়ী মকর সংক্রান্তি পালিত হয় পৌষ মাসের শেষ দিনে। এই সময়ে ঘরে ঘরে নতুন ফসল ওঠে, সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয় এবং শীতের কাঁপুনি ফুরতে শুরু করে।

আরও পড়ুন- প্রিয়জনদের শুভেচ্ছা জানান মকর সংক্রান্তিতে, রইল উৎসবের ১০ সেরা বার্তা .

Latest Videos

আজ বাংলায় যে পৌষ সংক্রান্তি, তামিলনাড়ুতে হচ্ছে পোঙ্গল, কর্ণাটকে মকর সংক্রমনা বা ইল্লু বিল্লা, অন্ধ্রে আর কেরলে মকর সংক্রান্তি, রাজস্থান ও গুজরাতে উত্তরায়ণ, মহারাষ্ট্রে তিলগুল, মধ্যপ্রদেশে সুকরাত, কাশ্মীরে শায়েন-ক্রাত, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল, জম্মুতে লোহরি বা মাঘী, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় খিচড়ি পরব, আসামে ভোগালি বিহু। রাজ্য বা ভাষা ভেদে যেখানে যে নামেই পালিত হোক না কেন আসলে তা পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি উৎসব। কোথাও আরাধনা করা হয় লক্ষ্মীর, কোথাও বা সূর্যের, কোথাও আবার পূজিত হন সরস্বতী। যার পুজোই হোক না কেন প্রসাদের উপকরণ মূলত এক- নতুন ফসল।

আরও পড়ুন- এপার ও ওপার বাংলায় এক মাস ধরে পালিত হত টুসু, বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব আজ বিলুপ্তির পথে

ভারতের বাইরে বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে যেখানে ভারতীয় সংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছে সেখানেও মকর সংক্রান্তি পালিত হয়। দেশ ভেদে সেখানকার বাষা অনুযায়ী উৎসবের নামও অন্য হয়। নেপালে এই দিনটি মাঘে সংক্রান্তি, থাইল্যান্ডে এর নাম সংক্রান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান। লক্ষণীয় সংক্রান্তি নামটির সঙ্গে কিন্তু মিল রয়েছে।লাওসে এই উৎসবের নাম পি মা লাও, মায়ানমারে থিংগিয়ান। এ ছাড়াও পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এবং ভারত মহাসাগরীয় বহু দ্বীপে যেখানে ভারত থেকে বহু মানুষ অভিবাসী হয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেই পালিত হয় মকর উৎসব।

পৌষ সংক্রান্তি, পৌষপার্বণ বা নবান্ন বাঙালির কাছে মূলত নতুন ফসলের উৎসব। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে ওঠে নতুন ধান, নতুন অন্ন। তাই এই উৎসব বাঙালির কাছে ‘নবান্ন’। পৌষ সংক্রান্তি আবার শষ্যের উৎসব। খেতের পাকা ধান প্রথম ঘরে ওঠে; সেই উপলক্ষে এই উৎসব। পাকা ধানের শিস এনে নির্দিষ্ট কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়। দু’তিনটি খড় এক সঙ্গে লম্বা করে পাকিয়ে তার সঙ্গে ধানের শিস, মুলো, সরষে ইত্যাদি ফুল, আমপাতা ইত্যাদি বেঁধে ‘আউনি বাউনি’ তৈরি করা হয়। এই ‘আউনি বাউনি’ ধানের গোলা, খড়ের চাল, ঢেঁকি, বাক্স-প্যাঁটরায় গুঁজে দেওয়া হয়। বাংলায় পৌষ পার্বণের প্রধান পর্ব হল পিঠে।

এই সময়ে কেবল নতুন ধানই নয়, বাংলার গ্রাম গঞ্জের খেজুর গাছের রস দিয়ে তৈরি হয় নতুন গুড়। নতুন চালের গুঁড়ো, নতুন গুড়, নারকেল আর দুধ দিয়ে তৈরি হয় নানা ধরনের পিঠে। তাই পৌষ পার্বণের আরেক নাম পিঠে পার্বণ। পৌষ মাসের শেষ দিনে এই আয়োজন শুধু গ্রামে নয় শহরের প্রায় সব বাড়িতেই পিঠে হয়। জ্যোতির্বিদ্যা অনুযায়ী দশম ঘর অর্থাৎ মকরের ঘরে সূর্যের প্রবেশকে বলে মকর সংক্রান্তি। মহাকাশে এই পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীতে বড় ও উষ্ণ দিনের সূচনা হয়। সূর্যের বেশিক্ষণ অবস্থান ফসল পাকার জন্য জরুরি। এই দিন থেকেই সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু এবং শীত বিদায়ের পালা। 

প্রাচীনকাল থেকেই এই উৎসব চলে আসছে। তবে কবে বা কতদিন আগে থেকে তার সুস্পষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। হতে পারে এটা হাজার বছরের উৎসব বা তারও আগের তবে পুরাণেও এর উল্লেখ আছে। পুরাণ অনুযায়ী, মকর সংক্রান্তির এই মহাতিথিতেই মহাভারতের পিতামহ ভীস্ম শরশয্যায় ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন। আবার অন্য মত অনুযায়ী, এই দিনই দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। বিষ্ণু অসুরদের বধ করে তাঁদের কাটা মুন্ডু মন্দিরা পর্বতে পুঁতে দিয়েছিলেন, তাই মকরসংক্রান্তির দিনই সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাস হয়ে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মানা হয়। অন্য মতে, সূর্য এ দিন নিজের ছেলে মকর রাশির অধিপতি শনির বাড়ি এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন। তাই এই দিনটিকে বাবা ছেলের সম্পর্কের একটি বিশেষ দিন হিসাবে ধরা হয়।

পদার্থ বিজ্ঞান অনুযায়ী, সূর্যের গতি দু’প্রকার- উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ণ। ২১ ডিসেম্বর সূর্য উত্তরায়ন থেকে দক্ষিণায়নে প্রবেশ করে। এ দিন রাত সবথেকে বড় হয় আর দিন সবথেকে ছোট হয়। এর পর থেকে দিন বড় আর রাত ছোট হতে শুরু করে। মাঘ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত ছ’মাস উত্তরায়ণ। আবার শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত ছ’মাস দক্ষিণায়ণ। পৌষ মাসের সংক্রান্তিকেই বলা হয় উত্তর সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। শাস্ত্র মতে উত্তরায়ণে মৃত্যু হলে মুক্তি প্রাপ্তি হয় এবং দক্ষিণায়ণে মৃত্যু হলে ঘটে পুনরাবৃত্তি অর্থাৎ তাঁকে আবার সংসারে ফিরে আসতে হয়। সূর্য এ দিনই ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। এর থেকেই মকর সংক্রান্তির উৎপত্তি।

Share this article
click me!

Latest Videos

'এটা কোন মুখ্যমন্ত্রী? হিন্দুদের দায়িত্ব মুসলিমরা নেবে, বাংলাদেশ হয়ে যাবে তো' | Suvendu Adhikari
রাগের মাথায় এ কী করে বসলো স্বামী! দেখলে আঁতকে উঠবেন, চাঞ্চল্য Nadia-এ | North 4 Parganas News Today
সুকান্ত মজুমদারকে বিজেপির নবজাতক আখ্যা কুণালের, পাল্টা দিয়ে যা বললেন সুকান্ত : Sukanta on Kunal
নেতাজির 'মৃত্যুদিন' ঘোষণা রাহুলের, ক্ষোভ উগরে একহাত নিলেন সুকান্ত মজুমদার | Sukanta on Rahul
ED Raid Today: Kolkata-র একাধিক স্থানে ফের ED-র অভিযান! Salt Lake-এ হাজির বিশাল ইডির দল | Kolkata