কবে থেকে কিভাবে শুরু হয়েছিল পুজোর নতুন বাংলা গান

  • সেই সময় আধুনিক গান কথাটি ব্যাপক ভাবে চালু হয়
  • গান রেকর্ড করে প্রকাশের জন্য তৈরি হল কোম্পানি
  • পুজোর সময় বেরোনো রেকর্ডের সংখ্যা
  • পুজোর গান আর সেটাই হয়ে গেল সারা বছরের গান

সতেরোটি নতুন গানের রেকর্ড বেরোনোর একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় ১৯১৪ সালে পুজোর ঠিক কয়েক দিন আগে। বিজ্ঞাপনটিতে বিভিন্ন শিল্পীর নাম এবং তাঁর গানের কয়েকটি কথাও উল্লেখ করা ছিল। যেমন, মানদাসুন্দরী দাসী – ‘এস এস বলে রসিক নেয়ে…’ (কীর্তন) ও ‘আমার সুন্দর…’, কে মল্লিক –   ‘গিরি একি তব বিবেচনা’ – (আগমনী; মিশ্র কাফি) ও ‘কী হবে ঊমা চলে যাবে’ – (বিজয়া; ভৈরবী), কৃষ্ণভামিনী – ‘মাকে কে জানে’- (মালকোষ) ও ‘অলসে অবশে বল কালী’- (পূরবী)…। এই ভাবে ওই বিজ্ঞাপনে ছিল আরও কয়েক জন শিল্পীর নাম ও তাঁদের গাওয়া গানের কয়েকটি কথা। উল্লেখ্য, ছিল বেদনা দাসী – জন্মাষ্টমীর গান ও ‘আমি এসেছি বঁধু হে’- (কেদারা মিশ্র) এবং মিস দাস (অ্যামেচার)- ‘হে মোর দেবতা’-(ইমন কল্যাণ) ও ‘প্রতিদিন আমি হে জীবনস্বামী’-(সিন্ধু কাফি)…। প্রসঙ্গত, এই মিস দাস হলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের বোন অমলা দাস। তখন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরা রেকর্ডে গান গাইতেন না। বলা যায়, তিনিই প্রথম নাম গোপন করে রবীন্দ্রনাথের গান রেকর্ড করেন। সে কালে হাসির গানও শ্রোতাদের পছন্দ ছিল। ওই বিজ্ঞাপনেই ছিল হাসির গান; শিল্পী অভয়াপদ চট্টোপাধ্যায় – ‘স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আদর’ ও ‘স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আদর’। তবে ওটাই যে প্রথম পুজোর গানের বিজ্ঞাপন এবং ওই গানগুলিই যে প্রথম পুজোর গান তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ তার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ হাতে নেই।

Latest Videos

১৯৩০ সালের ২৭ এপ্রিল কলকাতা বেতারে হৃদয়রঞ্জন রায় নামে এক শিল্পীর বাংলা গান সম্প্রচারের সময় উপস্থাপক বাংলা গান কথাটির আগে আধুনিক শব্দটি ব্যবহার করেন। এর পরই বাংলা গানের পরিবর্তে আধুনিক গান কথাটি ব্যাপক ভাবে চালু হয়ে যায়। একই বছর বাংলা ছবি কথা বলতে শিখলে নাটকের মতো ছবিতেও গানের ব্যবহার আরম্ভ হয়ে যায়। আর তার জন্য দু’-একটি ক্ষেত্র বাদ দিয়ে অধিকাংশ গানের জন্য শিল্পীকে ছাড়াও দরকার পড়ে গান-লিখিয়ে অর্থাৎ গীতিকার এবং তাঁর লেখা গানের কথায় সুরারোপের জন্য দরকার হয় সুরকারের। তখন থেকে চালু হয়ে যাওয়া আধুনিক গান বা বেসিক রেকর্ড এবং ছবির গানের জন্য গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে এগিয়ে এলেন অনেকেই। পাশাপাশি গান রেকর্ড করে প্রকাশের জন্য তৈরি হল কোম্পানি। এর পর থেকেই মানে তিরিশের দশকেই এইচএমভি, কলম্বিয়া, হিন্দুস্তান, মেগাফোন, মেনোলা প্রভৃতি থেকে প্রায় প্রতি মাসেই বেরোতে থাকে গানের রেকর্ড। আগমনী, বিজয়া, বাগানবাড়ির গান, ভক্তিগীতি, নাটকের গানের পাশাপাশি বেসিক রেকর্ড যা বেরোত তার বেশিটাই আধুনিক গান। লক্ষণীয়, গত শতকের ছয়ের দশকের গোড়া থেকেই সারা বছর ধরে রেকর্ড প্রকাশ ভীষণ ভাবেই কমে গেল। তার জায়গায় বাড়ল পুজোর সময় বেরোনো রেকর্ডের সংখা। খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় হয়ে গেল পুজোর গান আর সেটাই হয়ে গেল সারা বছরের গান।

আরও পড়ুন- আগে পুজোতে নতুন জামার মতোই দেখা মিলত পুজোর নতুন সিনেমা

তবে তার আগেই বিশ ও তিরিশের দশকে পুজোর সময় প্রকাশিত গানে পাওয়া গেল অবিস্মরণীয় কিছু শিল্পী। যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম আশ্চর্যময়ী দাসী, আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, কমল ঝরিয়া ইত্যাদি। ১৯১৭ সালেই পুজোর গানে কৃষ্ণচন্দ্র দে রেকর্ড করেন ‘আর চলে না মা গ’ ও ‘মা তোর মুখ দেখে কি’। ১৯৩৫-এর পুজোয় ‘সখী লোকে বলে কালো’ ও ‘আমি চন্দন হইয়ে’, ১৯৩৯-এ ‘স্বপন দেখিছে রাধারানি’ ও ‘হিয়ায় রাখিতে সে পরশমণি’ তাঁর উল্লেখযোগ্য পুজোর গান। ১৯২৩-এ ইন্দুবালার পুজোর রেকর্ড ‘তুমি এস হে’ (ইমন) ও ‘ওরে মাঝি তরী হেথায় বাঁধব না’(জংলা) দারুন হিট করেছিল। আঙ্গুরবালার ১৯২২-এর পুজোয় ‘কত আশা করে তোমারি দুয়ারে’ ও ‘আমার আমায় বলিতে কে আর’ ভক্তিগীতি হলেও খুব জনপ্রিয় হয়। কমল ঝরিয়া প্রথম রেকর্ড করেন ১৯৩০-এর পুজোতে, ‘প্রিয় যেন প্রেম ভুলো না’(গজল) ও ‘নিঠুর নয়নবান কেন হান’(দাদরা)।

দেশাত্মবোধক গানও তখন পুজোর গানের রেকর্ডে জায়গা পেত। ১৯৩৮ সালের পুজোয় দিলীপকুমার রায় রেকর্ড করেন ‘বন্দেমাতরম’ ও ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’, ১৯৪৭ সালের পুজোয় করেন ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ ও ‘ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে’। ১৯২৫-এর পুজোয় নজরুলের গানের প্রথম রেকর্ড ছিল ‘জাতির নামে বিজ্জাতি’, গানটি গেয়েছিলেন হরেন্দ্রনাথ দত্ত। এর আগেও ১৯২২-এর পুজোতে প্রকাশিত হয় ‘সেকালের বাংলা’, ‘চরকার গান’ও ‘দেশ দেশ নন্দিত করি’। দিলীপ কুমার রায়ের পুজোর গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল আগেই; ১৯২৫ সালে ‘ছিল বসি সে কুসুমকাননে’-(কীর্তন) ও ‘রাঙ্গাজবা কে দিল তোর পায়ে’-(মিশ্র সিন্ধু), গান দু’টির রেকর্ড খুবই উল্লেখযোগ্য। দিলীপ কুমার রায়ের গানের প্রসঙ্গে আরেকটি নাম এসেই পড়ে; তিনি উমা বসু। দিলীপ কুমারের কথা ও সুরে ১৯৩৯ সালে উমা বসুর পুজোর গান ‘জীবনে মরণে এস’ সুপারহিট। সে কালে পুজোর গানে অন্যান্য গানের মতোই রেকর্ড হত অতুলপ্রসাদ সেনের গানও। ১৯২৫-এর পুজোয় বিখ্যাত শিল্পী সাহানা দেবীর গাওয়া ‘কত গান তো গাওয়া হল’ ও ‘শুধু দুদিনেরি খেলা’ জনপ্রিয় হয়েছিল। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কনক দাস ১৯৩২-এ পুজোর গানে রেকর্ড করেন অতুলপ্রসাদের দু’টি গান।

Share this article
click me!

Latest Videos

'উনি চক্রান্তের বড় শিকার' নেতাজির জন্মদিনে এ কী বললেন মমতা? Mamata on Netaji
রাগের মাথায় এ কী করে বসলো স্বামী! দেখলে আঁতকে উঠবেন, চাঞ্চল্য Nadia-এ | North 4 Parganas News Today
সুকান্ত মজুমদারকে বিজেপির নবজাতক আখ্যা কুণালের, পাল্টা দিয়ে যা বললেন সুকান্ত : Sukanta on Kunal
নেতাজির 'মৃত্যুদিন' ঘোষণা রাহুলের, ক্ষোভ উগরে একহাত নিলেন সুকান্ত মজুমদার | Sukanta on Rahul
ED Raid Today: Kolkata-র একাধিক স্থানে ফের ED-র অভিযান! Salt Lake-এ হাজির বিশাল ইডির দল | Kolkata