স্বামী বিবেকানন্দও এভাবে জীবনযাপন করেছিলেন। বিশেষ করে তরুণদের জন্য তাঁর কথা ও শিক্ষা অমূল্য। তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে শুধু সাফল্যই পাওয়া যায় না।
স্বামী বিবেকানন্দ সরল জীবনযাপনের পক্ষে ছিলেন। তিনি অন্যকে বস্তুগত উপায় থেকে দূরে থাকতে শিক্ষা দিতেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে কিছু পেতে হলে প্রথমেই অপ্রয়োজনীয় জিনিস ত্যাগ করে সাধারণ জীবনযাপন করতে হবে। বস্তুবাদী চিন্তা লোভ বাড়িয়ে আমাদের লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করে।
দান করলে আনন্দ আরও বেশি হয়-
তখন স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকায় এক মহিলার কাছে থাকতেন, যেখানে তিঁনি নিজের খাবার নিজেই রান্না করতেন। একদিন তিঁনি খাবার খেতে যাচ্ছিল এমন সময় কিছু ক্ষুধার্ত শিশু এসে কাছে দাঁড়াল। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর সমস্ত রুটি সেই শিশুদের মধ্যে বিতরণ করেছিলেন। তা দেখে এক মহিলা স্বামীজিকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনি ওই শিশুদের সব রুটি দিয়ে দিয়েদিলেন। এখন আপনি নিজে কি খাবেন?' তিনি হেসে এর উত্তর দিলেন, 'রুটি হল পেটের আগুন নিভানোর জিনিস। এই পেটে না গিয়ে, ওদের পেটেই গেল। আসলে পাওয়ার আনন্দের চেয়ে দেওয়ার আনন্দ অনেক বেশি।'
ভয়ের মুখোমুখি হোন-
একবার, বেনারসের একটি মন্দির থেকে বের হওয়ার পথে, বিবেকানন্দকে অনেক বানর ঘিরে ধরেছিল। স্বামীজি এই পরিস্থিতে পড়ে ছুটতে লাগলেন, কিন্তু বানরগুলো তাঁদের হাল ছাড়ছে না। কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বৃদ্ধ সন্ন্যাসী তাঁকে বললেন, 'থামুন এবং ওদের মুখোমুখি হোন!' বিবেকানন্দ তৎক্ষণাৎ ঘুরে বানরের দিকে এগোতে লাগলেন। এই মনোভাবের কারণে সব বানর পালিয়ে গেল। এই ঘটনা থেকে তিঁনি শিখেছেন ভয়ে পালিয়ে না গিয়ে তার মুখোমুখি হতে হবে। বহু বছর পর তিনি এক সম্বোধনেও বলেছিলেন, 'যদি কোনও কিছু তোমাকে ভয় দেখায়, তা থেকে পালিয়ে যেও না। ভয়ের মুখোমুখি ও আর ভয়কে জিতে নাও-
অন্যের পিছনে দৌড়াবেন না
এক ব্যক্তি বিবেকানন্দকে বলেছিলেন, 'আমি কঠোর পরিশ্রম করেও সফল হতে পারি না।' এতে স্বামীজি তাকে তার কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে আসতে বললেন। তিনি যখন ফিরে আসেন তখন কুকুরটি ক্লান্ত ছিল, কিন্তু তার মুখ উজ্জ্বল ছিল। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি সোজা পথে হাঁটতে গিয়ে রাস্তার কুকুরের পেছনে দৌড়াচ্ছিল।' স্বামী বললেন, এটা তোমার উত্তর। আপনি আপনার গন্তব্যে না গিয়ে অন্যের পিছনে দৌড়াতে থাকেন। নিজের গন্তব্য ঠিক করুন, সফলতা আসবেই।
আমাদের সংস্কৃতি আমাদের চরিত্র দ্বারা তৈরি
বিদেশ যাওয়ার সময় স্বামী বিবেকানন্দকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, 'আপনার বাকি জিনিসগুলি কোথায়?' 'এটাই সব,' তিনি উত্তর দিলেন। কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে বলল, 'আরে! আপনার সংস্কৃতি কেমন? শরীরে শুধু চাদর জড়ানো। এ নিয়ে তিনি হেসে বললেন, 'আমাদের সংস্কৃতি তোমাদের সংস্কৃতি থেকে আলাদা। আপনার দর্জিরা আপনার সংস্কৃতি গড়ে তোলে, অন্যদিকে আমাদের সংস্কৃতি আমাদের চরিত্র দ্বারা তৈরি। সংস্কৃতি পোশাকে নয়, চরিত্রের বিকাশে।' এটি আমাদের বাহ্যিক চেহারা থেকে দূরে থাকতে এবং আমাদের চরিত্রের বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করতে শেখায়।