পছন্দের বিরিয়ানি থেকে বছরের এই প্রথম দিন উৎযাপন এই দুই এসেছে মুঘলদের হাত ধরেই। সেই সঙ্গে বছরের প্রথম দিন নতুন হালখাতা নিয়ে নতুন ভাবে খাজনা আদায়ের হিসেব তুলে রাখা হতো।
সম্রাট আকবরই নাকি প্রথম বাংলায় নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির করা ভেবেছিলেন। যা পরে বাস্তবায়িত করা হয়। সম্প্রীতির উৎসব পয়লা বৈশাখের সূচণাও হয়েছিল মুঘল আমল থেকেই। 'দ্য হিস্টোরিক্যাল ডিকশিনারি অফ বেঙ্গলিস'-এ উল্লেখ রয়েছে খাজনা আদায়ের সমস্যা হওয়া নিয়ে বাংলায় প্রথম সন গণনা শুরু। সেই সময়ে চৈত্র মাসের শেষের দিন খাজনা আদায়ের শেষ দিন বলে ধরা হত। খাওয়া দাওয়া থেকে বা নানান পোশাক, এক্ষেত্রে মুঘলদের অবদান অনস্বীকার্য। কারণ জানতে চাইছেন পছন্দের বিরিয়ানি থেকে বছরের এই প্রথম দিন উৎযাপন এই দুই এসেছে মুঘলদের হাত ধরেই। সেই সঙ্গে বছরের প্রথম দিন নতুন হালখাতা নিয়ে নতুন ভাবে খাজনা আদায়ের হিসেব তুলে রাখা হতো।
কোথায় কবে থেকে এই উৎসবের সূচণা হয়-
ভারতের গ্রামীণ বাঙ্গালি সম্প্রদায়ে ভারতের অনেক অঞ্চল ও নেপালের মত বিক্রমাদিত্যকে বাংলা দিনপঞ্জির আবির্ভাবের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই দিনপঞ্জির নামকরণ করা হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে বিক্রমাদিত্যের নাম অনুসারে। কিন্তু সেই অঞ্চলগুলোর মত বাংলায় বঙ্গাব্দের সূচনা ৫৭ খ্রিস্টপূর্বে হয়নি, বরং ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয়েছিল, যা নির্দেশ করছে বঙ্গাব্দের সূচনা প্রমাণ সময়কে কোনও এক সময় পরিবর্তিত করা হয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নববর্ষের উৎসবগুলো হিন্দু বিক্রমী দিনপঞ্জির সঙ্গে সম্পর্কিত। মনে করা হয় শশাঙ্কের শাসন আমলেই এই পরিবর্তনের শুরু হয়।
পয়লা বৈশাখ সূচণা-
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দিনে এই উৎসব পালিত হয়। দেশ বিদেশে থাকা সমস্ত বাঙালি এই বিশেষ দিনটি উৎযাপন করে থাকেন। তবে ঐতিহাসিকদের মতে, পয়লা বা পহেলা বৈশাখ উৎসবটি ঐতিহ্যগত হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত যা বৈশাখী ও অন্য নামেও পরিচিত। ২০২৩ সালের পয়লা বৈশাখ ১৪৩০ অনুষ্ঠিত হবে ইংরেজির ১৫ এপ্রিল শনিবার।
বাংলায় পয়লা বৈশাখ উৎযাপন-
নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আনন্দে বাংলার গ্রামীণ এবং নাগরিক জীবনের মেলবন্ধন সাধিত হয়ে সকলে একসূত্রে বাঁধা পড়ে। সারা চৈত্র মাস জুড়েই চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। পশ্চিমবঙ্গে মহা-সমারোহে সাড়ম্বরে সঙ্গে উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ। বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটিতে বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সঙ্গে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে থাকে সমগ্র পশ্চিম বাংলায়।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে রীতিনীতি-
এছাড়া, বহু পরিবারে বর্ষশেষের দিন টক এবং তিতা খেয়ে সম্পর্কের সকল তিক্ততা ও অম্লতা বর্জন করার প্রতীকী প্রথা একবিংশ শতাব্দীতেও বিদ্যমান। পরের দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ প্রতিটি পরিবারে স্নান সেরে বয়ঃজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করার রীতি প্রচলিত। বাড়িতে বাড়িতে এবং সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে মিষ্টান্ন ভোজন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশই এদিন থেকে তাদের ব্যবসায়িক হিসেবের নতুন খাতার উদ্বোধন করে, যার পোশাকি নাম হালখাতা । এই উপলক্ষ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে মঙ্গলদাত্রী লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা করা হয়। নতুন খাতায় মঙ্গলচিহ্ন স্বস্তিক এঁকে সূচণা করেন নতুন এক বছরের।