কেন আজও পর্যন্ত জাপানেই থেকে গিয়েছে নেতাজির চিতাভষ্ম, কেন দেশের বদলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল তাইওয়ানে

নেতাজি কন্যা অনিতা বলেছেন যে, ‘ডিএনএ পরীক্ষা নেতাজির রহস্যময় মৃত্যু সম্পর্কিত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে। যা আজও জাপানের রেকঞ্জি মন্দিরে ’সুভাষ চন্দ্র বসুর ভষ্মের কলসি' নামে রাখা আছে।'

 

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৬ তম জন্মজয়ন্তী, যিঁনি 'তুমি আমাকে রক্ত ​​দাও, আমি তোমাকে স্বাধীনতা দেব' স্লোগান দিয়ে প্রতিটি ভারতীয়ের মধ্যে দেশপ্রেমের বোধ জাগিয়েছিলেন, আজও তাঁর মৃত্যু রহস্যের জট কাটেনি। সুভাষ চন্দ্র ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম এক যোদ্ধা, যিঁনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ভারতের সীমানার বাইরে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটাও আশ্চর্য পাশাপাশি রহস্যজনক যে, ১৬৫ তম জন্মজয়ন্তীতেও স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পরেও এই মহান বীরের চিতাভষ্ম ভারতেও পৌঁছায়নি। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে, তাঁর মেয়ে অনিতা বোস পাফ ভারত সরকারের কাছে আবেদন পর্যন্ত করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, 'সময় এসেছে যখন তাঁর চিতাভষ্ম তাঁর মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে আনা উচিত।' এর পাশাপাশি তিঁনি ডিএনএ পরীক্ষার কথাও বলেছেন। অনিতা আরও বলেছেন যে, 'এই পরীক্ষা নেতাজির রহস্যময় মৃত্যু সম্পর্কিত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে। যা আজও জাপানের রেকঞ্জি মন্দিরে সুভাষ চন্দ্র বসুর ভষ্মের কলসি নামে রাখা আছে।'

 

Latest Videos

জাপানের তদন্ত প্রতিবেদন-

অনেক ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন যে নেতাজি ১৮ আগস্ট ১৯৪৫ সালে তাইওয়ানে মারা যান যখন তিনি একটি বিমানে ছিলেন। এই বিমানটি বোমা বিস্ফোরণের শিকার হয়েছিল। কিছু জাপানিও নেতাজির মৃত্যুর সময় সঙ্গে ছিলেন। ১৯৫৬ সালে, জাপানে একটি বিশদ তদন্ত প্রতিবেদন আসে। এটি ২০১৬ সালে ডি-ক্লাসিফাইড করা হয়েছিল। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে নেতাজির শেষকৃত্য তাইহিকু প্রিফেকচারে করা হয়েছিল। এই জায়গাটি বর্তমানে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেই রয়েছে। এরপর তাঁর মৃতদেহ তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এসএ আইয়ারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যদিও তাঁর বাকি জিনিসপত্র সেই সময়ে টোকিও ভিত্তিক ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাসোসিয়েশনের রামামূর্তিকে দেওয়া হয়েছিল। এই নথিগুলি ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সালে টোকিওতে ইম্পেরিয়াল সদর দফতরে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

 

টোকিওতে এক মন্দিরেই আছেন তিঁনি-

১৯৪৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, তাঁর চিতাভষ্ম টোকিওতে অবস্থিত রেনকোজি মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছিল। তাঁরপর থেকে এখন পর্যন্ত এই মন্দিরে এই ধ্বংসাবশেষ রাখা হয়েছে। মন্দিরের পুরোহিত কেইওই মোচিজুকির কাছে একটি চিতাভষ্মের ঘট ছিল। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে যতদিন পর্যন্ত নেতাজির এই চিতাভষ্ম ভারতে না যাবে, ততদিন তিনি এই ঘটের যত্ন নেবেন। সেই থেকে প্রতি বছর নেতাজির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে মন্দিরে প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। এর প্রধান মন্দিরে এই সমাবেশটি পরিচালনা করে, যেখানে জাপান এবং ভারতের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিকরাও নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানাতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। যে মন্দিরে এই ভষ্ম রাখা হয়েছে, সেটি একটি বৌদ্ধ মন্দির এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা এখানে আসেন।

 

দেশ কী করেছিল-

২০১৬ সালে, যখন ভারত সরকার নেতাজি সম্পর্কিত ফাইলগুলি প্রকাশ্যে আনে, তখন এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে ভষ্মের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারত সরকার অর্থ প্রদান করে। ১৯৬৭ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত, ভারত মন্দিরটিকে ৫২,৬৬,২৭৮ টাকা দিয়েছে। এমন নয় যে এই চিতাভষ্ম ভারতে আনার চেষ্টা কখনোই হয়নি। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ১৯৫০-এর দশকে চিতাভষ্মগুলি অর্জনের প্রচেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কথিত আছে যে বোসের পরিবারের সদস্যরা তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে অস্বীকার করেন। এমন পরিস্থিতিতে নেহরু চিতাভষ্ম ভারতে আনতে পারেননি। এর পর জাপান সরকার এই ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন- 'মহামানব' তিঁনি যার কোনও স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই, কীভাবে পেলেন 'নেতাজি' এবং 'দেশ নায়ক' উপাধি

অনেক প্রতিশ্রুতি-

১৯৭৯ সালে, যখন মোরারজি দেশাই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, জাপানের সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। নেতাজির ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (INA) সঙ্গে এই অফিসারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তিনি মোরারজি দেশাইয়ের কাছে এই চিতাভষ্ম ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করেন। এক-দুই বছরের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশ্বস্ত করা হয় ওই কর্মকর্তাকে। কিন্তু দেশাই তাঁর পদ হারিয়েছিলেন এবং এইভাবে তাঁর প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ থেকে যায়। শেষবার ২০০০ সালে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী নেতাজির এই চিতাভষ্ম ভারতে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। বহু চেষ্টার পরও আজও পর্যন্ত ভারতে আসেনি নেতাজির ভস্ম।

Share this article
click me!

Latest Videos

'মাননীয়া আপনার শাড়িতে দুর্নীতির কালো ছোপ ছোপ দাগ' মমতাকে (Mamata) এ কী বললেন অগ্নিমিত্রা ?
‘অনেকদিন পর কেষ্টদা ফিরেছে তাই একটু বিশৃঙ্খলা হচ্ছে’ অদ্ভুত ব্যাখ্যা Satabdi-র! | Satabdi Roy News
ছয় Bidhan Sabha কেন্দ্রের ছটিতেই এগিয়ে TMC, আবির খেলায় মাতলেন গঙ্গাসাগরের তৃণমূল কর্মীসমর্থকরা
ট্যাব কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে শিক্ষকদের জোরদার বিক্ষোভ! দাবি সঠিক তদন্তের! | Bengal Tab Scam
'কয়লার ৭৫ ভাগ তৃণমূলের (TMC) পকেটে যায়' বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari)