মনোবিদ তটিনী দত্তের মুখোমুখি সবুজ মুখোপাধ্য়ায়।
সবুজ--আজ একটা ইন্টারেস্টিং খবর ছিল। একজন ১৩ বছরের মেয়ে ঘনঘন পেটব্য়াথার সমস্য়া নিয়ে ডাক্তারদের কাছে আসে। তার পেট স্ক্য়ান করে পাকস্থলীতে একটা বলের মতো কিছু দেখা যায়। ডাক্তাররা অস্ত্রোপচার করেন। পেট থেকে বের হয় আধ কিলোর মতো চুল আর বেশ কিছু খালি শ্য়াম্পুর প্য়াকেট।
তটিনী-- তাই? সত্য়িই ইন্টারেস্টিং খবর।
সবুজ-- খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মেয়েটির কাছের কেউ মারা গিয়েছে সম্প্রতি। সে মানসিক রোগে ভুগছে। সেই থেকেই নাকি এসব অখাদ্য় কুখ্য়াদ্য় খাওয়া শুরু করেছে। মানসিক রোগে এমটাও হয় বুঝি?
তটিনী-- হয় বইকি। একে বলে পাইকা। একধরনের ইটিং ডিসঅর্ডার। এরসঙ্গে জুড়ে থাকে ডিপ্রেশন আর অ্য়াংজাইটি। তবে ডিপ্রেশনটাই বেশি থাকে। যদিও হালফিলে একে ইমপালস কনট্রোল ডিসঅর্ডারের মধ্য়ে অন্তভুক্ত করা হয়েছে।
সবুজ-- যে কোনও কাউরই কি এই রোগ হতে পারে?
তটিনী-- এর মূলে থাকে ডিপ্রেশন। যাদের একটু অ্য়াংশাস টাইপ পার্সোনালিটি, তাদেরও হতে পারে এই রোগ। যাদের ইমপালস কনট্রোলের ক্ষমতা খুব দুর্বল, তাদের এই মধ্য়ে এই রোগ বেশি দেখা দেয়।
সবুজ-- এই অসুখে তাহলে অখাদ্য় কুখাদ্য় সব খেয়ে নেয় রোগী?
তটিনী-- হ্য়াঁ, অখাদ্য় জিনিস খেয়ে নেয় রোগী। আমি এমন অনেক রোগী দেখেছি, যাদের মধ্য়ে এই প্রবণতা ছিল। এরা এই ধরনের জিনিস না খেয়ে থাকতে পারে না।
সবুজ-- কীরকম?
তটিনী-- ধরুন, একজন চায়ের সঙ্গে চায়ের ভাঁড় খেয়ে নিতেন। এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন তিনি। যখনই মিটিং হত, তিনি ভাঁড়ে করে চা আনাতেন। চায়ের সঙ্গে তিনি ভাঁড়টাও খেয়ে নিতেন। তারপর একজনকে দেখতাম, স্কুলে পড়ত, সে সুতো খেতো। স্কুলের কাপড়ের ব্য়াগ থেকে সুতো বার করে খেতো। তারপর ধরুন, জামার মধ্য়ে থাকা সুতো খেত, বা ধরুন পাশে কেউ বসে আছে, মা বা অন্য় কেউ, একটু টেনে সুতোটা মুখে দিত। একৃ-একজনের এক-একরকম। যে সুতো খাচ্ছে, সে ভাঁড় না-ও খেতে পারে। আরেকটা হয় মেয়েদের ক্ষেত্রে, প্রেগনেনসির সময়ে। সেটা কিছু হরমোনাল কারণে হয়। আগেকার দিনে উনুনে রান্না হত। উনুন ধরানোর সময়ে উনুনের ছাই, উনুন লেপার সময়ে মাটি মুখে দিতেন মহিলারা। খেয়ে নিতেন। তবে যাদের শুধু এই সময়টায় হয়, তাদের আবার বাচ্চা হয়ে গেলে সমস্য়াটা চলে যায়। অনেক পড়ুয়াকে দেখবেন, স্কুলে বা কলেজ ইচ্ছে করে বেঞ্চির ধারে বসে দেওয়াল খুঁটে খাওয়ার জন্য়।
সবুজ-- আর দাঁত দিয়ে নখ কাটা বা নখ খাওয়া?
তটিনী-- না, ওটা অন্য় ব্য়াপার। নখ খাওয়ার মধ্য়ে অ্য়াংজাইটি বা ইনসিকিউরিটির ব্য়াপার থাকে ঠিকই, তবে সেটা পাইকা নয়।
সবুজ-- চিকিৎসায় কি সারে এই রোগ?
সবুজ-- চিকিৎসায় একদম ঠিক হয়ে যায়। ওষুধ একটু লাগে। সেইসঙ্গে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি খুব ভাল কাজ করে। সার্পোটিভ কাউনসেলিং, বিহেবিভার মডিফিকেশন ট্রেনিং দারুণ কাজ করে। রোগী সেরে ওঠে তাড়াতাড়ি।