প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক স্বর্ণকুমারী প্রথম কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছিলেন

  • তিনি জন্মেছিলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে
  • পুরুষদের সৃষ্টিশীলতা তাঁকেও স্পর্শ  করেছিল
  • অন্য মেয়েদের মতো তাঁরও বিয়ে হয় অল্প বয়সে
  • স্বর্ণকুমারী নিজের সাহিত্য সাধনায় মগ্ন ছিলেন

মেয়েরা পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ অবশ্যই করতে পারে। এটা আজ মনে ভাবা বা মুখে বলা অনেক সহজ। একদিন তো সেটা ছিল না। সেই সময়েও তিনি সেকথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। নিজের জীবনেও তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন। বাড়ির অন্য মেয়েরা ঘরের কাজ, রান্নাঘরে নতুন নতুন খাবার তৈরি, নানা রকম হাতের কাজ, রূপচর্চা আর গল্প-গাছায় যখন সময় কাটাতেন তখন সেসব থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে রাখতেন। তিনি নিজের ঘরে আপন-মনে ব্যস্ত থাকতেন নিজের পড়াশোনা, সংগীত রচনা ও সাহিত্য সাধনায়।  

আরও পড়ুন- ঋণ মুকুব সংক্রান্ত ভুয়ো খবর ও বিভ্রান্তিকর ভিডিও সোশ্য়াল মিডিয়ায়, সাবধান হোন এড়িয়ে চলুন

জন্মেছিলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। সে বাড়ির পুরুষ সদস্যদের সৃষ্টিশীলতা তাঁকেও স্পর্শ  করেছিল। অন্য মেয়েদের মতো তাঁরও বিয়ে হয় অল্প বয়সে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি থেকে জানা যায়,  তাঁর স্বামী জানকীনাথ যখন ইংল্যান্ডে যান তখন স্বর্ণকুমারী অনেকদিন বাপের বাড়িতেই ছিলেন। ওই সময়ে স্বর্ণকুমারীর সঙ্গীত চর্চা, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা, ও ভালোভাবে ইংরেজি সাহিত্য পাঠের সুযোগ হয়েছিল। তাছাড়া তিনিও দাদাদের সঙ্গে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজেও মেতে ওঠেন। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী যখন পরিবারের প্রাচীন প্রথাগুলিকে নারী স্বাধীনতার পথ হিসেবে প্রশস্ত করছিলেন তখন স্বর্ণকুমারী নিজের সাহিত্য সাধনায় মগ্ন ছিলেন।

Latest Videos

স্বর্ণকুমারীর লেখক জীবন শুরু হয়ে গিয়েছিল বিয়ের আগে থেকেই। বিয়ের পর তাতে কোনো আঁচ লাগেনি। বরং বিয়ের পর তার সাহিত্যপ্রতিভা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়। স্বামী জানকীনাথের সহযোগিতায় স্বর্ণকুমারীর সাহিত্যচর্চা আরো গভীরতা পেতে থাকে। ১৮৭৬ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস ‘দীপনির্বাণ’ প্রকাশিত হয়। তার আগে ১৮৫২ সালে হানা ক্যাথরিন মুলেনস তাঁর ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত প্রকাশ করে বাংলা ভাষার প্রথম ঔপন্যাসিকের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। কিন্তু স্বর্ণকুমারী দেবীই ছিলেন প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক। গল্প কবিতা লেখা দিয়ে তার সাহিত্যে হাতে খড়ি হতে না হতেই মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দীপনির্বাণ’ লেখা।  বঙ্কিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনী’ প্রকাশের এক দশকের মধ্যে বাংলা ভাষাতে লেখা কোন মহিলার প্রথম উপন্যাস।

আরও পড়ুন- এড়িয়ে চলুন এই ধরণের খাদ্য, নয়তো বুড়িয়ে যাবেন অকালেই

ভাবনায় দীপনির্বাণ ছিল জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত একটি উপন্যাস। এরপর স্বর্ণকুমারী দেবী অনেক উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেন। সেই সঙ্গে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনায় তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। তিনি অসংখ্য গানও রচনা করেছিলেন। সে যুগের প্রেক্ষিতে স্বর্ণকুমারী দেবী মহিলা সাহিত্যিক হিসাবে যথেষ্ট গুরুত্বের দাবীদার।  
দেশের মানুষের নৈতিক অবনতি আর আত্মকলহের সুযোগে বিদেশি শত্রু বারবার আমাদের দেশকে আক্রমণ করেছে, কেড়ে নিয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। সেই গ্লানি আমাদেরকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে শুধুমাত্র নিজেদের কারণেই। স্বর্ণকুমারী এই কথাই বলেছেন তাঁর ‘দীপনির্বাণ’ উপন্যাসে। এই বক্তব্যের ওজন যুগের প্রেক্ষাপটে উপন্যাসটিকে  এত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিল। এই নিয়ে একটা মজার ঘটনা আছে তা হচ্ছে, প্রথমে উপন্যাসে লেখকের নামের জায়গায় লেখা ছিল জনৈক লেখিকা। এদেশে তখন স্ত্রী শিক্ষার প্রসার ঘটেনি। অনেক মহিলাই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। সে সময় কোন মহিলার উপন্যাস লেখাটা ছিল বেশ শক্ত কাজ। 

কলকাতার তখনকার বিদ্বান পন্ডিত মানুষেরা উপন্যাসের ভাষা আর বিষয়বস্তুর তাৎপর্য দেখে অবাক হয়েছিলেন। তাঁর লেখা উপন্যাস প্রশংসিত হয়েছিল হিন্দু প্যাট্রিয়ট, দ্যা ক্যালকাটা রিভিউতে। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন ইংল্যান্ডে থাকায় তার কাছে সেই উপন্যাসের এক কপি পৌঁছায়। তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি যে একজন মহিলা এই রকম একটি উপন্যাস লিখতে পারেন। তিনি ভেবেছিলেন উপন্যাসটি ছোটভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছদ্মনাম ব্যবহার করে লিখেছে। তিনি অভিনন্দন জানিয়ে তাকে চিঠি লিখেছিলেন “জ্যোতির জ্যোতি কি প্রচ্ছন্ন থাকিতে পারে?

শুধু তাই নয় ১৮৭৯ সালে স্বর্ণকুমারী দেবী প্রথম বাংলা গীতিনাট্য বসন্ত উৎসব রচনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর অনুজ রবীন্দ্রনাথ ওই ধারাতেই একের পর এক গীতিনাট্য রচনায় সফল হয়েছিলেন। উল্লেখ্য; ১৮৭৭ সালে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পারিবারিক পত্রিকা ভারতী চালু করেন। এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দ্বিজেন্দ্রনাথ সাত বছর এই পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন। এরপর এগারো বছর এই পত্রিকা সম্পাদনা করেন স্বর্ণকুমারী দেবী। তাঁর সম্পাদনায় পত্রিকা স্বতন্ত্র্য চরিত্র পেয়েছিল এবং ভারতী পত্রিকা প্রায় অর্ধশতাব্দীকালব্যাপী প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকার চাহিদাই রবীন্দ্রনাথকে নিয়মিত লিখতে বাধ্য করত এবং বহু বছর তিনি এক নাগাড়ে এই পত্রিকায় নিজের লেখা পাঠিয়ে এসেছিলেন।
স্বর্ণকুমারী সামাজিক সংস্কার ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৮৮৯ ও ১৮৯০ সালে পণ্ডিতা রামাবাই, রামাবাই রানাড ও কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনিও জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নেন। তিনিই ছিলেন প্রথম বাঙালি অহিলা যিনি জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

Share this article
click me!

Latest Videos

Narendra Modi : কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কে জোর ভারতের, দেখুন কী বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
'উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করব', এগরার জনসভায় এসে কাকে বললেন Suvendu Adhikari ?
অনলাইনে পুজোর দেওয়ার নামে প্রতারণা! ঘাড় ধরে নিয়ে গেল পুলিশ | Hooghly News Today
'একটা আস্ত অশিক্ষিত...গোটা রাজ্যটাই জঙ্গিদের হাতে' কড়া বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari
লজ্জা মমতার! জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য এই বাংলা!| Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari