কলকাতার আশপাশের বেশ কিছু রাজবাড়ির পুজোর অজানা গল্প

  • রাজবাড়ির দুর্গা-দালান নৈবেদ্যর ডালাতে ভরে যেত
  • রাজবাড়ির পুজো দেখার জন্য দূর গ্রামের মানুষ আসত
  • তাতে থাবা বসিয়েছে বারোয়ারি পুজো
  • দশমীর দিন বিসর্জনের আগে পর্যন্ত পরিবারে পালিত হত অরন্ধন

সেই রাজারাও নেই, রাজত্বও নেই। পড়ে আছে শুধু রাজবাড়ি। কালের নিয়মে তারও বয়স বেড়েছে। পূর্ব-পুরুষদের আমলের জৌলুস আজ অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে। রাজ আমলের ঠাটবাঁট, আদবকায়দার মধ্যে টিকে আছে একমাত্র দুর্গাপুজো। তাও কি আর সেকালের মতো আছে। একসময় রাজবাড়ির দুর্গা-দালান নৈবেদ্যর ডালাতে ভরে যেত। রাজবাড়ির পুজো দেখার জন্য কত দূর গ্রামের মানুষ আসত। এখন তাতে অনেকটাই থাবা বসিয়েছে বারোয়ারি পুজো। তবে আগের নিয়ম মেনেই হচ্ছে রাজবাড়ির পুজো। লর্ড কর্ন‌ওয়ালিসের আমলে তৈরি হয়েছিল বারুইপুর রাজবাড়ি। সে রাড়িতে দুর্গাপুজো আরম্ভ হয়েছিল ১১৫৭ বঙ্গাব্দে। তখন থেকেই মহিষাসুরমর্দিনীর একচালা প্রতিমা। ষষ্ঠীতে হত বোধন। অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণের সন্ধিপুজোয় বন্দুক ফাটানো হত। নবমীতে হত পাঁঠাবলি। দশমীর দিন বিসর্জনের আগে পর্যন্ত পরিবারে পালিত হত অরন্ধন। সকালে পরিবারের সব সদস্যরা পান্তা ভাত খেতেন। সন্ধ্যায় প্রতিমা নিরঞ্জনের পর রান্না আরম্ভ হত।  

আরও পড়ুন- প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের সম্মান, করোনারূপী অসুরকে ইঞ্জেকশন দিয়ে বধ করছেন মা দুর্গা

Latest Videos

সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে দশমীর দিন রাজবাড়ির দুর্গাদালান থেকে দুটি নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয়। মহালয়ার এক সপ্তাহ আগে শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে বোধন শুরু হয়। তবে এই রাজবাড়িতে দুর্গা আসেন একাই। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এটাই ঐতিহ্য শেওড়াফুলি রাজবাড়ির। আঁটিসাড়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয়েছিল অষ্টধাতুর সর্বমঙ্গলা মূর্তি।  মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করে মন্দির তৈরি হয়। তারপর শুরু হয় পুজো। শেওড়াফুলির আগে বর্ধমানের পাটুলির নারায়ণপুরে রাজত্ব ছিল এঁদের। পরিবারে বিগ্রহের সমাহার দেখে প্রচুর জমি দান করেছিলেন মোঘল সম্রাট আকবর। গঙ্গার গ্রাসে সেই জমি তলিয়ে যেতেই পরিবারের একাংশ চলে আসে শেওড়াফুলিতে। এখানে এসেও রাজবাড়ির ঠাকুর দালানে পুজো চলতে থাকে। সর্বমঙ্গলা মূর্তিতেই দুর্গা পুজো হয়। কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে অর্থাৎ মহালয়ার এক সপ্তাহ আগে শুরু হয় দুর্গাপুজো। পুজোয় পশুবলি হয় না। বলি হয় চালকুমড়োর। সর্বমঙ্গলাকে অর্পণ করা হয় কাঁচা ভোগ। কোনও মতেই রান্না করা ভোগ অর্পণ করা হয় না।

শেওড়াফুলির রাজ পরিবারের হাত ধরেই শ্রীরামপুরের রাজবাড়ির পত্তন। আজ সেই রাজপাট নেই,তবুও এখনো ঐতিহ্য রক্ষা করে শ্রীরামপুর রাজবাড়ীর দুর্গা পুজো হচ্ছে। শোনা যায় এক কালে দুর্গা পুজোর সময়ে এই বাড়িতে এসে থাকতেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, আসতেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র। রাজবাড়ির ঠাকুরদালানেই প্রতিবছর ষোড়শোপচারে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। পুরনো ঘরানা অনুযায়ী একচালার মধ্যে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে দেবী দূর্গার সঙ্গে থাকেন কার্ত্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী। প্রতিমাকে অলঙ্কৃত করা হয় ডাকের সাজ বা রাঙতা আর শোলার সাজে। দেবীপুরাণ মত মেনে এই রাজবাড়ির পুজো শুরু হয় প্রতিপদের দিন থেকে। পুজো শুরুর দিন থেকে নবমী পর্যন্ত পরিবারের সকলে নিরামিষ খাবার খান। দশমীর দিন পুজো শেষ হলে বাড়ির বিবাহিত মহিলারা মাছ–ভাত খান। পুজো উপলক্ষে চারদিন জমজমাট হয়ে ওঠে শ্রীরামপুরের রাজবাড়ি। সঙ্গীতানুষ্ঠানের আসর বসে। কথিত আছে, শ্রীরামপুরের বাড়ির দুর্গাপুজোর সঙ্গীতানুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী, ভোলা ময়রা, বাগবাজারের রূপচাঁদ পক্ষীর দল। 

প্রসঙ্গত, আজ থেকে বছর কুড়ি আগে এক স্থানীয় বৃদ্ধা শ্রীরামপুরের রাজবাড়ির দেবী দুর্গাকে ‘বুড়ি মা’ নামে সম্বোধন করেন। নামটি পরিবারের সকলের ভালো লেগে যায়। সেই থেকে পুজোটি বুড়ি মা নামে সমধিক পরিচিতি লাভ করে। কথিত আছে গোবরডাঙা রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল বাংলাদেশের যশোরে। পরে বংশধররা গোবরডাঙায় চলে আসেন। প্রতিবছর জন্মাষ্টমীতেই রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে মায়ের কাঠামোতে মাটি পড়ে। মহালয়ার দিন প্রসন্নময়ীর মন্দিরে ঘট পেতে পুজোর পরই শুরু হয়ে যায় দেবীর বোধন। ঠাকুরদালানে দুর্গা প্রতিমা প্রতিষ্ঠা হয় ষষ্ঠীতে। সপ্তমীতে কালীমন্দির থেকে কলাবউ নিয়ে এসে মায়ের অস্ত্র দান করে শুরু হয় সন্ধ্যা আরতি। অষ্টমী, নবমী, দশমীতে নিয়ম করে শাস্ত্রমতে পুজো হয়। এক সময়ে পুজো উপলক্ষে মোষ বলির প্রচলন ছিল। পরে তা পাঁঠা বলিতে রূপান্তরিত হলেও ৯৭ সালে বলিপ্রথা নিয়ম করে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে চাল কুমড়ো ও আখ বলি দিয়ে নিয়মরক্ষা করা হয়। কিন্তু এ বছর সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় পড়েছে ছেদ, করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর পুজো বন্ধ রেখেছেন গোবরডাঙা রাজবাড়ির লোকজন। বংশধররা জানান, এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই বাইরে রয়ে গিয়েছেন। তাঁরা কেউই প্রায় হাজির হতে পারবেন না, তাই এ বছর পুজো বন্ধ।

Share this article
click me!

Latest Videos

'বালি চুরি, কয়লা চুরিতে যুক্ত পুলিশদের একাংশ' বিস্ফোরক মন্তব্য মমতার | Mamata Banerjee
ভাটপাড়ায় প্রোমোটারের 'দাদাগিরি', আতঙ্কে জমির মালিক, কি বলছে পুরসভা! দেখুন | Bhatpara News
বাগদায় ফের চলল বুলডোজার! হাইকোর্টের নির্দেশে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ৬টি দোকান | Bagdah News
বিচ্ছেদের পরও ভয়ঙ্কর আক্রমণ প্রাক্তন জামাইয়ের! আতঙ্কে গোটা পরিবার | Hooghly News Today
Mamata Banerjee : 'মোদী বাংলার কৃষকদের একটা পয়সাও দেয় না' বিতর্কিত মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের