ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৫০ বছরে ৮৫ টি রাজ্য রয়েছে যেখানে শীর্ষস্থানীয়ে কোনও মহিলা নেই। এমন পরিস্থিতিতে উত্তর কেনিয়ার একটি গ্রাম উমোজা আজ আলোচনার শীর্ষে রয়ে গিয়েছে। বিশেষ এই দিনে আজ এই গ্রামের বিষয়ে না জানালেই নয়। এখানে পরিচালনার সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে সমস্ত কার্যনির্বাহের দায়িত্ব রয়েছে মহিলাদের উপর। এক কথায় সম্পূর্ণরূপে একটি মহিলা পরিচালিত গ্রাম। বিশেষ বিষয়টি হল পুরুষরা এই গ্রামে নিষিদ্ধ। এর পিছনে রয়েছে এক অন্য কারণ। ২০১৫ সালে এই গ্রামে মহিলাদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৭।
আরও পড়ুন- পুরুষ বর্জিত এক লেসবিয়ান সমাজ গড়ার স্বপ্ন, ৫০ বছর আগের এক অসামান্য কাহিনি
কেন পুরুষেরা এই গ্রামে থাকতে পারে না মহিলা পরিচালিত গ্রাম বলে? তবে পুরুষ শাষিত গ্রাম থেকে তো মহিলাদের বিতারিত করা হয় না! এমন প্রশ্ন আপনার মনে আসতেই পারে। তবে শুনে নিন এর আসল কারণ। গ্রামটি গঠিত হয় ১৯৯০ সালে। ১৫ জন ধর্ষিত হওয়া মহিলারা একসঙ্গে এই গ্রামে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীকালে এখানে বাল্য বিবাহ, সুন্নত এবং পারিবারিক সমস্যার সম্মুখিন হওয়া মহিলারাও এই গ্রামে এস আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন।
এখানে মহিলারা প্রত্যেকেই নির্ভরশীল। নিজেদের খাবার, কাপড় এবং বাড়ির জন্য নিয়মিত আয় করেন তাঁরা। ছোট ছোট ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত গ্রামের প্রতিটি মহিলা সদস্যা। এঁদের হাতে বানানো গয়না বর্তমানে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। বহু দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসেল মহিলা পরিচালিত এই গ্রাম দেখার জন্য। পর্যটকদের থেকে নেওয়া সামান্য প্রবেশমূল্যে চলে গ্রাম উন্নয়নের কার্যকলাপ।
আরও পড়ুন- আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেন পালন করা হয়, জেনে নিন এর ইতিহাস
গ্রামটি প্রতিষ্ঠা করার কথা যেই মহিলা ভেবেছিলেন তিনি হলেন রেবেকা লোলোসোলি। এমন একটি চিন্তা ভাবনা করার জন্য তাঁকে প্রচুর সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছিল। শাস্তিও পেয়েছিলেন তিনি। প্রথমে ৪ জন মহিলা নিয়ে তিনি জেদের বশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে এই গ্রামের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতি বছর নিয়ম করে এই গ্রাম পরিচালনার দায়িত্ব বদল হয়।
২ জন প্রতিনিধি প্রতি বছর গ্রাম পরিচালনা দায়িত্ব পান। এখন এই গ্রামে বাচ্চা-সহ জন সংখ্যা মোট ৪০০। ছোটদের পড়াশুনো থেকে ঘরের কাজ সমস্ত কিছু শেখান গ্রামের মহিলারাই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজেকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এই গ্রাম থেকে মেয়েরা পড়াশুনো ও পাশাপাশি গ্রাম উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে উমোজা গ্রামের প্রতিটি মহিলার জন্য রইল বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য।