'ঘরে ঢুকে ভারতকে মেরেছি'- পুলওয়ামা সন্ত্রাসে চাঞ্চল্যকর বয়ান পাক মন্ত্রীর, দেখুন সেই বিতর্কিত ভিডিও

  • বিশ্বের সামনে আরও একবার খুলে গেল পাকিস্তানের মুখোশ
  • সীমান্ত-পার সন্ত্রাসে এবার সরাসরি কাঠগড়ায় পাকিস্তান
  • খোদ এক পাক মন্ত্রীয় চাঞ্চল্যকর বয়ানে মুখ পুড়ল ইসলামাবাদের
  • পাকিস্তান সরকারের মদতেই হয়েছিল পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা
     

Asianet News Bangla | Published : Oct 29, 2020 2:58 PM IST / Updated: Oct 29 2020, 09:30 PM IST

'ভারতকে ঘরে ঢুকে মেরেছি'- পাক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীর মন্তব্যে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় খসে পড়ল পাকিস্তানের মুখোশ। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি-তে বক্তব্য রাখার সময় এমনই বিস্ফোরক বয়ান দিয়েছেন ফাওয়াদ। তিনি বলেন, 'পুলওয়ামা-য় আত্মঘাতী জঙ্গি বিস্ফোরণ দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে আমরা ভারতের ঘরে ঢুকে হত্যার তাণ্ডবলীলা চালিয়েছি'। এই বয়ানে স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় মুখ পুড়েছে ইসলামাবাদের। কারণ, এই বয়ান বলে দিয়েছে পাকিস্তান কীভাবে সীমান্তপার সন্ত্রাসে মদত জোগাচ্ছে। ভারতের বুকে সন্ত্রাসবাদী হামলায় পাকিস্তানের যে মদত রয়েছে, তা নিয়ে বহু বছর ধরে সরব নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের মাটিতে খুল্লমখুল্লা সন্ত্রাসের কারখানা যে চলছে তার প্রমাণও বহুবার আন্তর্জাতিক দুনিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। এমনকী, জয়শ-ই-মহম্মদ থেকে লস্কর-ই-তইবার-রা যে দশকের পর দশক পাকিস্তানের মাটিতে ভারতবিরোধী সন্ত্রাস শিবির এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণের কেন্দ্র চালিয়ে যাচ্ছে, সে নিয়েও বহু প্রমাণ নানা সময়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে আন্তর্জাতিক মহলের সামনেও নিয়ে এসেছে ভারত। পুলওয়ামা জঙ্গি হামলা শুধুমাত্র যে একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ষড়যন্ত্রে বাস্তবায়িত হয়েছিল তেমনটা নয়, এর পিছনে পাকিস্তান সরকারের প্রত্যক্ষ মদত নিয়েও সরব হয়েছিল ভারত। 

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামাতে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা হয়। প্রায় আড়াই হাজার সিআরপিএফ জওয়ানকে নিয়ে যাওয়া কনভয়ের উপরে এই হামলা হয়েছিল। এতে ৪০ জনেরও বেশি জওয়ান শহিদ হন। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ বা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি-তে বক্তব্য দেওয়ার সময় ফাওয়াদ বলেন, 'হাম নে হিন্দুস্তান কো ঘুস কে মারা'। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়- 'আমরা ভারতের ঘরে ঢুকে মেরেছি'। 'ঘুস কে মারা'- এই শব্দের ব্যাপকতাকে বাংলায় আক্ষরিক তর্জমা করলে দাঁড়ায়, 'হত্যার তাণ্ডবলীলা চালিয়েছি'। ওই বক্তব্যেই ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, 'পুলওয়ামায় আমাদের সাফল্য আসলে সেই সব মানুষের সাফল্য যাঁরা ইমরান খানের শাসনে ভরসা রাখেন। আপনারা এবং আমরা সকলেই এই সাফল্যের শরিক।'

"

ফাওয়াদ চৌধুরীর এই মন্তব্যে বিতর্কের আগুন জ্বলতেই তিনি নিজের বক্তব্যকে পরে একটু বদলে দেন। তিনি দাবি করেন যে তিনি বলেছেন, 'পুলওয়ামা হামলার পর, যখন আমরা ভারতের ভূমিতে ঢুকে তাদের জবাব দিয়েছি।' এরপর পর টুইটার-এও বিতর্কিত মন্তব্যে খানিকটা জল ঢালার চেষ্টা করেন ফাওয়াদ। তিনি বলেন,'আমাদের যুদ্ধবিমান যখন ভারতের সমরাস্ত্রের ঘাঁটিগুলোকে নিশানা করেছিল, তখন আমরা সাধারণ-নিরীহ মানুষদের হত্যা করে বীরত্ব প্রদর্শন করিনি এবং আমরা সন্ত্রাসের নিন্দা করি।' 

আরও পড়ুন- ধূসর থেকে পাকিস্তানের মুখ 'কালা' করতে চলেছে ভারত, এফএটিএফ-এর চাবুকই এবার মোদীর অস্ত্র

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার প্রত্যুত্তরে ভারত এয়ার স্ট্রাইক করে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে ভারতীয় যুদ্ধবিমান সন্ত্রাসবাদী ক্যাম্পগুলিকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়। এর পরের দিন পাকিস্তান ভারতীয় ভূখণ্ডে এফ সিক্সটিন যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ে। পাক যুদ্ধবিমানকে পাল্টা উত্তর দেয় ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান। ভারতীয় বায়ুসেনার পাল্টা প্রতিরোধে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের একটি এফ সিক্সটিন যুদ্ধবিমান। ভারতীয় বায়ুসেনার একটি বিমানও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভেঙে পড়ে। এই যুদ্ধবিমানে ছিলেন উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। এরপর কীভাবে অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান তা সকলেরই জানা। কিন্তু, যেটা জানা ছিল না, সেটা হল ভারতের এক হুমকিতে শিয়রে সমন দেখেছিল পাকিস্তান। যদিও, ভারত সরকার বা বায়ুসেনার পক্ষ থেকে অভিনন্দনের মুক্তি নিয়ে কড়া হুমকি-র বিষয়টিকে কখনও বড়াই করা হয়নি। পাকিস্তানের বিরোধী দলনেতা আয়াজ সিদ্দিকি এক কড়া সত্যকে সামনে নিয়ে আসেন মঙ্গলবার। পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বিতর্কে অংশ নেওয়ার সময় আয়াজ সিদ্দিকি-র বয়ানে পাকিস্তানের ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকার এবং পাক সেনাবাহিনীর গরিমায় বিশাল ধাক্কা লাগে। আয়াজ সিদ্দিকি তাঁর বক্তব্যে দাবি করেছেন, অভিনন্দন বর্তমানের গ্রেফতারির পর তৎকালিন বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এবং সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া একটি বৈঠকে বসেন। আয়াজ সিদ্দিকি দাবি করেছেন, রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতে শাহ মেহমুদ কুরেশি সেনাপ্রধানকে জানান, অবিলম্বে অভিনন্দন বর্তমানকে না ছাড়লে রাত ৯টার মধ্যে পাকিস্তানকে আক্রমণ করার হুমকি দিয়ে রেখেছে ভারত। সিদ্দিকি আরও জানিয়েছেন, যে তাঁর স্পষ্ট মনে রয়েছে সেদিন ইমরানের সঙ্গে এক বৈঠক ছিল কুরেশির। তিনি সেই বৈঠকে যোগ দেননি। কুরেশির দফতরে আসেন সেনাপ্রধান বাজওয়া। তাঁর পা ঠকঠক করে কাঁপছিল এবং তিনি রীতিমতো আতঙ্কিত ও উত্তেজিত ছিলেন। সব দেখে কুরেশি নাকি বাজওয়াকে বলেন অভিনন্দন-কে ছেড়ে দিন। না হলে রাতের মধ্যে পাকিস্তানকে আক্রমণ করবে ভারত।  

"

সিদ্দিকির এই বয়ানকে ঘিরে রীতিমতো কাটাছেড়া চলছে। পাকিস্তানের অবস্থা নিয়ে অনেকই হাসাহাসি করছে। এমন এক সময়ে যেভাবে ফাওয়াদ চৌধুরী পুলওয়ামা হামলার দায় পাকিস্তানের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন তাতে এবার পাকিস্তানকে সীমান্তপার সন্ত্রাসে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাঠগড়ায় তুলতে নয়াদিল্লিকে খুব একটা পরিশ্রম .করতে হবে না।  

আরও পড়ুন- পুলওয়ামা হামলায় এফএটিএফ-কে ধোকা, কীভাবে ইমরান-কে বাঁচিয়েছিল জইশ জঙ্গিরা

পুলওয়ামা হামলার পর থেকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী মঞ্চ যা এফএটিএফ নামে পরিচিত তাদের গ্রে-লিস্টে পাকিস্তানকে রেখে দিয়েছে। এর মানে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্টই সন্দেহ রয়েছে এফএটিএফ সদস্য দেশগুলির। এফএটিএফ-এর সাম্প্রতিক বৈঠকেও পাকিস্তানকে গ্রে-লিস্টের তালিকা থেকে বের করা হয়নি। পুলওয়ামা হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় পাকিস্তানকে কৌশলগতভাবে একঘরে করার জন্য লড়াই চালাবে ভারত। ফাওয়াদ চৌধুরীর মন্তব্য, এক্ষেত্রে সাহায্য করবে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা। 

Share this article
click me!