আর্জেন্টিনীয়দের বিশ্বাস মুদ্রাস্ফিতির হার তিন অঙ্কের ঘরে গেলেই ক্রীড়া ক্ষেত্রে বড় সাফল্য পায় দেশ। কাপ আসার সঙ্গেই সুদিন আসবে বলেও আশা আর্জেন্টিনীয়দের।
একদিকে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট। মুদ্রাস্ফিতির চাপে বেহাল অবস্থা গোটা দেশের। রোজ চড়চড় করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। দেশের অর্থনীতির এই চরম সঙ্কটের মধ্যেও স্বপ্ন দেখছে আর্জেন্টিনাবাসী। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। মেসির পায়ের জাদুতেই যেন সব দৈনতার অবসান হবে, সুদিন ফিরবে আর্জেন্টিনায়। ৩৬ বছর পর যাবতীয় পরাজয়ের গ্লানি মুছে কাপ জয়ের স্বপ্ন প্রত্যেক আর্জেন্টিনীয়র চোখে। আসলে আর্জেন্টিনার কাছে ফুটবল তো শুধু খেলা নয়। ফুটবল মানে আবেগ, আত্মমর্যাদা। নিত্যদিনের দৈন্য, বাড়তে থাকা জিনিসপত্রের দাম, প্রতেকদিনের শোষণ সবকিছুর যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিতে পারে একটাই জাদু, ফুটবল। জাদুকর লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনীয়দের বিশ্বাস মুদ্রাস্ফিতির হার তিন অঙ্কের ঘরে গেলেই ক্রীড়া ক্ষেত্রে বড় সাফল্য পায় দেশ। কাপ আসার সঙ্গেই সুদিন আসবে বলেও আশা আর্জেন্টিনীয়দের।
মুদ্রাস্ফিতি,অর্থনৈতিক সঙ্কট আর্জেন্টিনায় নতুন কিছু নয়। গত নভেম্বরে আর্জেন্টিনায় মুদ্রাস্ফিতির হার ছিল ৮৮ শতাংশ। ডিসেম্বরের মধ্যে এই অঙ্ক আরও ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে সে দেশের সরকার সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে এই প্রথম নয় বিগত এক দশক ধরেই মুদ্রাস্ফিতির চাপ সহ্য করছে আর্জেন্টিনাবাসী। রোজ বাড়তে থাকা জিনিসের দামেও অভ্যস্ত তাঁরা। এত কিছুর মধ্যেও দেশবাসীকে একমাসের স্বস্তি দিয়েছিল ফুটবল। রোজনামচার যন্ত্রণা ভুলে গোটা দেশ মেতেছিল বিশ্বকাপে। এটাই তাঁদের একমাত্র আঁকড়ে ধরার জায়গা। আর্জেন্টিনার শ্রমমন্ত্রী কেলি অলমোস বিশ্বকাপ শুরুর আগেই বলেছিলেন,'এটা দেশের মানুষের প্রাপ্য।' বিশ্বকাপের আবহে আবেগের পাশাপাশি স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে কেলি বলেছিলেন,'দেশের বাকি মানুষের মত আমিও চাই বিশ্বকাপ এবার এবার আমাদের দেশে আসুক। আমাদের ফুটবল ঘিরে আবেগের কোনও বিকল্প হয় না। দেশের মানুষের এই উৎসবটা প্রাপ্য।' পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে তিনি বলেন,'বিশ্বকাপ জয়ের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি মুদ্রাস্ফিতিতে লাগাম টানা।'
ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ৩-০ ব্যবধানে জয়ের পর মেসির সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে গলা ধরে এল সাংবাদিকেও। আবেগঘন গলায় শেষে একটাই কথা বললেন তিনি,'ফলাফল যাই হোক না কেন, মেসির জায়গা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।' আর মাত্র একটা ম্যাচ। তাঁরপরই আর্ন্তজাতিক ফুটবল থেকে বিদায় মেসির। সেমিফাইনালের পর মেসির সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না আর্জেন্টিনীয় সাংবাদিক। সাক্ষাৎকার শেষে তিনি বললেন,'আমি একটাই কথা বলতে চাই, এটা কোনও প্রশ্ন নয়। আমি শেষে আপনাকে শুধু একটাই কথা বলব, বিশ্বকাপ ফাইনাল আসছে, এবং আমরা সবাই চাই কাপ আর্জেন্টিনার হাতেই আসুক। কিন্তু ফলাফল যাই হোক না কেন মেসির জায়গার কোনও পরিবর্তন হবে না। আর্জেন্টিনায় এমন কোন বাচ্চা নেই যার কাছে আপনার টিম ফ্ল্যানেল নেই, সেটা নকল, আসল বা তৈরি করা হোক। ফুটবল বিশ্বে আপনার যা অবদান তা যে কোনও বিশ্বকাপ জয়ের থেকে অনেক বড়।' তিনি আরও সংযোজন করেন,'আপনি নিজের গোটা কেরিয়ারে সারা বিশ্বের সমর্থকদের যে আনন্দ দিয়েছেন, তার জন্য আমরা সবাই আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। ফলাফল যাই হোক না কেন আপনার প্রতি সমর্থকদের ভালোবাসা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
আরও পড়ুন -
আর্জেন্টিনাকে কেন সমর্থন করেন ভারতীয়রা? ব্যাঙ্কের পাশবই-এ উত্তর খুঁজে পেলেন নেটিজেনরা
বৃহস্পতিবারের অনুশীলনেও অনুপস্থিত মেসি, হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটই কি কারণ? বাড়ছে জল্পনা