ফুটবলের মক্কা কলকাতা। শতাধিক বছর ধরে ফুটবল খেলার ইতিহাসের তালিকায় বিশ্ব জুড়ে শহরের সংখ্যা হাতে গোনা। কলকাতা তার মধ্যে অন্যতম। আর কলকাতার ফুটবল পাগলামোর দূত সুজাতার মতো মানুষরা।
মারাদোনা-কে দেখে ভালো লেগেছিল। একমাথা ঝাঁকড়া চুলে ছোট্ট চেহারার মানুষটার বাঁ-পা-এর ফুটবল শিল্প মুগ্ধ করে দিয়েছিল ছোট্ট শিশুমনকে। সেই শুরু। এরপর বাড়ি জুড়ে সকলের আর্জেন্টিনার জন্য হাহাকার। ছোট্ট সুজাতাকে করে তুলেছিল লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার ফুটবলের অন্যতম বড় ভক্ত। সেইটা ছিল শুরু। আজও বিশ্বকাপ এবং ফুটবল-এর নাম শুনলে সুজাতার রক্ত নেচে ওঠে আর্জেন্টিনার জন্য। আলমবাজারের গঙ্গা লাগোয়া সরকারি আবাসনের এক তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাঁর আর্জেন্টিনা প্রেমের গল্প শোনাচ্ছিলেন সুজাতা।
পুরো নাম সুজাতা দাস। ছোট্ট থেকেই বাস এই সরকারি আবাসনে। দেখেছেন বাবা-জ্যাঠা থেকে পাড়াতুতো কাকা-দাদাদের উন্মাদনা আর্জেন্টিনাকে নিয়ে। যদিও, এই আবাসনে পেলের দেশ মানে ব্রাজিলের সমর্থক সংখ্যা অনেক বেশি। তাতে খুব একটা যায় আসে না সুজাতাদের। তাঁরা আজও বিশ্বাস করেন মারাদোনার দেশের ফুটবলাররা আজও মাঠের মধ্যে ফুল ফোটান। আজও সেদেশে সূর্যমুখী ফুল হাতে মাঠে নেমে আসেন কোবনও দেবতা। কখনও মারাদোনার বেশ ধরে, আবার কখনও মেসি-বাস্তিস্তুতাদের রূপ ধরে তারা বিশ্বকে তারা মোহিত করেন ফুটবল জাদুতে।
বিশ্বকাপের কয়দিন কি করেন সুজাতা? এমন প্রশ্নের উত্তরে জানান, ওই কয়দিন ফুটবল এবং আর্জেন্টিনার সঙ্গে দিনযাপন। নিত্যনৈমত্তিক সংসার সামলানোর দায়িত্ব তা বলে কাঁধ থেকে ফেলে দেওয়া যায় না। কিন্তু ব্যস্ততাটা চরমে ওঠে যায়। কারণ দৈনিক রুটিনে যে জুড়ে গিয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল এবং আর্জেন্টিনা। মারাদোনার দেশের প্রতিটি ম্যাচ মানে একটা চাপা উত্তেজনা শরীর এবং মন জুড়ে বয়ে বেড়ানো, আবার সঙ্গে প্রার্থনা প্রিয় দলের জয়ের জন্য। এই কয়দিন ঠাকুরের আসনে মেসিদের নামে কোনও প্রসাদ চড়ে কি না! এমন প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি। লাজুক সুজাতার কথায় বোঝাই গেল মেসিদের জন্য এই কয়দিন প্রার্থনা করতে কসুর করবেন না আলমবাজারের এই সরকারি আবাসনের এই মানুষটি।
আর্জেন্টিনার খেলা মানেই আবাসনের আবাসিক অফিসের সামনে বিশাল স্ক্রিনে খেলা দেখার ব্যবস্থা। আর্জেন্টিরা ভক্তরা এবারও তার আয়োজন রেখেছেন। সুজাতার কথায় খেলার দিনগুলো ওই আবাসিক অফিসের পাশে বসে সকলের সঙ্গে খেলা দেখা- আপাতত এমনটাই ভেবে রেখেছেন। আর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপটা নিয়ে দেশে ফিরলে তো কথাই নেই, আনন্দ-হুল্লোড়বাজির তুমুল উন্মাদনা যেমন থাকবে তেমনি থাকবে জমিয়ে মাংস-ভাতের পিকনিক। লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা নামক দেশটা হয়তো জানতেও পারবে না কলকাতার কোনও এক শহরতলি-র এঁদো গলিতে গঙ্গার ধার ঘেঁষেও একইভাবে যাপন হচ্ছে আর্জেন্টিনার জয়ের। আর তাতে মুখ হয়ে উঠেছেন সুজাতার মতো আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। কথায় আছে খেলার পাগালামো দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে আত্মাকে জুড়ে দেয়। তাই মারাদোনা-মেসিদের থখেকে নিজেদের এই কয়দিন আলাদা ভাবতে পারেন না সুজাতারা। আর এটাই কলকাতার ফুটবল ঐতিহ্য।
আরও পড়ুন-
রবিবার থেকে শুরু বিশ্বকাপ ফুটবল, জেনে নিন প্রিয় দলগুলি কবে মাঠে নামছে
বিশ্বকাপে মেসির পায়ে নতুন বুট, আরও গোল করবেন, দলকে চ্যাম্পিয়ন করবেন, আশায় অনুরাগীরা
মেসি-নির্ভরতা নয়, দলগত শক্তিই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় ভরসা