গ্রামবাংলায় এখনও খেলার চল যথেষ্ট। বিশেষ করে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলির সন্তানরা জীবনযুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য খেলাকেই বেছে নিচ্ছেন।
হাওড়ার সাঁকরাইলের মহিষগোট অঞ্চলের কিশোরী কোয়েল বর পরিবারের আর্থিক সমস্যা দেখছে জন্ম থেকেই। বাবা মিঠুন বর ধুলোগড় ট্রাক টার্মিনালে আনাজের বস্তা বওয়ার কাজ করেন। তিনিও খেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রথমে যোগাসন, পরে ভারত্তোলন করতেন। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে বেশিদূর এগোতে পারেননি। নিজের অধরা স্বপ্ন মেয়ের মধ্যে দিয়ে পূরণ করতে চেয়েছিলেন মিঠুন। সেই কারণে ছোটবেলাতেই মেয়েকে ভারত্তোলনের কোচ অষ্টম দাসের কাছে নিয়ে যান। ২০১৮ সাল থেকে ভারত্তোলনের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে কোয়েল। প্রথম সাফল্য আসে ২০১৯ সালে হুগলির কোন্নগরে একটি প্রতিযোগিতায়। সেই শুরু, তারপর থেকে একের পর এক সাফল্য। ১৩ বছরের মেয়েটি সেরা সাফল্য পেয়েছে এবার কমনওয়েলথ ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে। ৪৯ কেজি বিভাগে ১৫৫ কেজি ওজন তুলে সোনা জিতেছে কোয়েল। একইসঙ্গে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ১৫২ কেজি ওজন তুলে রুপো পেয়েছে দেউলপুর হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির এই পড়ুয়া।
কোয়েলের সাফল্যে শুধু স্কুূলই নয়, সারা গ্রাম উচ্ছ্বসিত। পুলিশ-সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দরিদ্র পরিবারের এই কিশোরীকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। কোয়েল যাতে ভবিষ্যতে আরও সাফল্য পেয়ে পরিবারের আর্থিক সমস্যা দূর করতে পারে, তার জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সবাই। এই কিশোরী কমনওয়েলথ ও এশিয়া স্তরে সাফল্য পাওয়ায় এবার পাতিয়ালায় নেতাজি সুভাষ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্পোর্টসে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ১৬ আগস্ট পাতিয়ালা চলে যাচ্ছে কোয়েল। শুরু হচ্ছে তার নতুন লড়াই।
এত খেলা থাকতে ভারত্তোলেনে আগ্রহ জন্মাল কীভাবে? কোয়েল জানাল, 'ছোটবেলায় বাবা নিয়ে যেত। বাবাকে ভারত্তোলন করতে দেখতাম। সেই থেকেই এই খেলার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। তারপর আমি নিজে ভারত্তোলন শুরু করলাম।' দিনে কতক্ষণ অনুশীলন করতে হয়? কোয়েল জানাল, 'আমি সকালে ৪৫ মিনিটের মতো ছুটি। তার সঙ্গে স্ট্রেচিং, ফিজিক্যাল ট্রেনিং করি। বিকেলে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা অনুশীল করি।' পাতিয়ালায় পরিবারের সবাইকে ছেড়ে একা থাকতে হবে। কী মনে হচ্ছে? কোয়েল জানাল, 'আশা করি ওখানে মানিয়ে নিতে পারব। কোচ যেভাবে বলবেন সেভাবে চলব। বই নিয়ে যাচ্ছি। ওখানে অনুশীলনের ফাঁকে পড়াশোনা করব।'
কোয়েলের বাবা বললেন, 'আমি নানা সমস্যার জন্য খেলা চালিয়ে যেতে পারিনি। মেয়ে সাফল্য পাচ্ছে দেখে খুব ভালো লাগছে। আমি চাই ও আরও বড় হোক। নানা প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাক।'
আরও পড়ুন-
বয়স মাত্র ১৭, বিশ্ব তিরন্দাজি চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ব্যক্তিগত সোনা অদিতির
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে ১০০ মিটার হার্ডলসে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়ে ব্রোঞ্জ জ্যোতির
PV Sindhu: র্যাকেটের বদলে হাতে স্টিয়ারিং, কে এফ ১ কার্টিং সার্কিটে পিভি সিন্ধু