'দুধ দেওয়া গরু'দের কি অসম্মান করেছেন মমতা, এবার মুসলিম ভোট পাবেন তো

যে গরু দুধ দেয়, তার চাঁটও খেতে হয়

লোকসভা ভোটের ফল বের হতেই বলেছিলেন মমতা

এবাক্য এখন ভয়াবহ রূপে ফিরে এসেছে তাঁর দিকে

চাঁট মানে যে কী, তা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন তিনি

Asianet News Bangla | Published : Mar 29, 2021 9:05 AM IST / Updated: Mar 30 2021, 09:55 AM IST

তাপস দাস - যে গরু দুধ দেয়, তার চাঁটও খেতে হয়। বাংলার এ প্রবচনটি ব্যবহৃত হয়েছে বহুবার। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর, এ কথা বলতে গৃহস্থেরও সম্ভবত বুক কাঁপে। পাছে মমতার মতই এ বাক্য ভয়াবহ রূপে ফিরে আসে। কথাটা মমতা বলেছিলেন, মুসলিমদের নিয়ে। দুধ মানে, ভোট। চাঁট মানে যে কী, তা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন তিনি।

ঘটনা হল, ভোটের জন্যই তিনি বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের। সে সুযোগ-সুবিধা সম্প্রদায়গত ভাবে মুসলিমদের প্রাপ্য ছিল কিনা, সে নিয়ে তেমন কিছু কথাবার্তা আলোচনার পরিসরে তুলে আনতে পারেননি তিনি। সাচার কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজন কতটা বঞ্চিত, বা আদৌ বঞ্চিত কিনা, সে নিয়ে তথ্য সামনে এনে তিনি নিজের যুক্তিজাল সাজাতে পারতেন হয়ত, কিন্তু সে দিকে তিনি মনোযোগ দেন নি। তার কারণ, তাঁর শেষমেশ উদ্দেশ্য ছিল ভোট, মুসলিম ভোট। মুসলিম সম্প্রদায়ের বঞ্চনা দূরীকরণ তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল না। উল্টোদিকে সম্প্রদায়গত ভাবে মুসলিমরাও তাঁকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, ভোট দিয়েছেন, অন্তত বেশ কিছু জায়গায়। ফলে, এই বয়ানটা জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে, মমতা মুসলিম তোষণ করে থাকেন।

বঙ্গ রাজনীতিতে এই ঘরানাটি নতুন। ভোটকে সম্প্রদায়গত ভাবে, ধর্মীয় সম্প্রদায়গতভাবে ভাগ করার ঘরানা ভারতে নতুন নয়, কিন্তু ধর্মপরিচয়ের রাজনীতিকে মুখ্য বয়ান করে তোলার যে প্রকল্প সারা ভারতে বিদ্যমান, তা বাংলায় সহজ হয়ে যেতে পারল মমতারই সৌজন্যে। যে কারণে মমতারই অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারল বাম-কংগ্রেস জোট, কেবল পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীকে সঙ্গী করে।

কিছুদিন আগেও যে আব্বাসের নাম ভাল করে জানতেন না কেউ, যাঁর পরিচয় ছিল ত্বহা সিদ্দিকীর আত্মীয় বলে, সেই ফুরফুরা শরীফের আব্বাস এখন দল ও ফ্রন্ট গড়ে বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের আসন নিয়ে লড়ালড়ি করতে পারছেন। তার আগে, তাঁর জোটের সঙ্গে হাত মেলাতে চলে এসেছিলেন আসাদুদ্দীন ওয়েইসির মত ব্যক্তিত্বও। মিমের সঙ্গে আব্বাসের জোট পাকাপাকি হবে হবে করছে যখন, সেই সময়েই আসরে নামেন কংগ্রেস-সিপিএমের আব্দুল মান্নান-মহম্মদ সেলিমরা।

তার পরের ঘটনা তো ইতিহাস। ব্রিগেডের সভায় ভাইজানের ডাকে ব্যাপক সমাবেশ, সমাবেশ মঞ্চে তাঁকে মঞ্চে দেখে জনগণের উচ্ছ্বাসের জোয়ারে বিমানবাবুদের মোহিত হওয়া, অধীরের সামান্য গোঁসা, এসব ছাপিয়ে গিয়েছে আব্বাসকে নিয়ে প্রতিদিন তৈরি হওয়া নতুন নতুন খবর আর বিতর্কে। আব্বাসের সাক্ষাৎকার নিয়ে দুভাগ হয়ে গিয়েছে বাংলার মহল।

আরও পড়ুন - দলবদলুদের ভোট দেয় না বাংলা, শুভেন্দু-রাজীবদের জন্যই কি মার খাবে বিজেপির জয়ের স্বপ্ন

আরও পড়ুন - বঙ্গ ভোটে পদ্ম হাতে ৯ মুসলমান, বিজেপি কি সত্যিই সংখ্যালঘু-বিরোধী - কী বলছেন প্রার্থীরা

আরও পড়ুন - মমতা, আব্বাস না বিজেপি - কোথায় যাবে মুসলিম ভোট, বাংলার নির্বাচনে এবার সবথেকে বড় ধাঁধা

এসবের মধ্যে মমতা সম্ভবত ভাবছেন, আব্বাসের প্রস্তাব মেনে নিলেই হত। হ্যাঁ, আব্বাস তো প্রথমে মমতার কাছেই গিয়েছিলেন, জোটপ্রস্তাব নিয়ে। তাঁকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো, এ কথা তো সাক্ষাৎাকারেই জানিয়েছেন আব্বাস। যে গরু দুধ দেয় প্রসঙ্গ জনসমক্ষে উচ্চারণের পর, তার বিপরীত পথে যাত্রার কৌশল কি মমতার বিপদ ডেকে আনতে পারে?

 

Share this article
click me!