সুন্দরবনের গোসাবার মতো প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলের মানুষের জন্য চালু হল চৌকাঠে ডাক্তার পরিষেবা। এটা অবশ্য কোন সরকারি প্রকল্প নয়, তবে এই স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মসূচিতে রাজ্য সরকার সাহায্য করছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
রাজ্য সরকারের দুয়ারে সরকার ইতিমধ্যেই বাংলার মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এই বাণে বর্তমান শাসক দল রাজনীতিতে বিরোধী শক্তিকে ধরাশায়ী করে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা দখল করেছে। এবার সুন্দরবনের গোসাবার মতো প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলের মানুষের জন্য চালু হল চৌকাঠে ডাক্তার পরিষেবা (Floating Health Camp)। এটা অবশ্য কোন সরকারি প্রকল্প নয়, তবে এই স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মসূচিতে রাজ্য সরকার সাহায্য করছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
আরও পড়ুন - নজরে আফগানিস্তান-সন্ত্রাসবাদ, ভারতের বার্তা তুলে ধরতে বিদেশ সফর শুরু নরেন্দ্র মোদীর
বণিকসভা ফিকির (ফেডারেশান অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্সের অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিস) নজরদারিতে সুন্দরবনের (Sundarban) প্রত্যন্ত দ্বীপে দ্বীপে শুরু হয়েছে এই ডিজিটাল ভাসমান স্বাস্থ্য পরিষেবা(Floating digital health service)। ‘ফাউন্ডেশান ফর ইনোভেশান ইন হেলথ’ নামে একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেরাই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় দ্বীপে দ্বীপে গিয়ে মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করবেন তাঁদের ভাসমান স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র নিয়ে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের মানুষকে এই চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আইআইটি খড়গপুর ও আইআইটি গুয়াহাটির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলের মানুষ এখনও পর্যন্ত অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য তাঁরা মূলত গ্রামীণ চিকিৎসকদের উপরেই নির্ভরশীল। এছাড়া গোসাবা ব্লক গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ছোট মোল্লাখালি প্রাথমিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিম্বা যে দু একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে সেগুলির উপর নির্ভর করেন। কিন্তু সরকারি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে সকলে যেতে পারেন না সঠিক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণে।
আরও পড়ুন - তালিবানদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি, নির্লজ্জ পাকিস্তানের জেদে বাতিল সার্ক সম্মেলন
এছাড়া গোসাবা ব্লকের ৯টি দ্বীপের ১৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় তিন লক্ষ মানুষের কাছে সেই স্বাস্থ্য পরিষেবা খুবই নিতান্ত। পাশাপাশি অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থাও সেখানে নেই। প্রত্যন্ত বাদাবনের এই মানুষগুলোর কথা মাথায় রেখেই এই ‘উদয় চৌকাঠে ডাক্তার’ পরিষেবা প্রকল্প চালু হয়েছে। সুন্দরবনের এক একটি দ্বীপে এই ভাসমান ক্যাম্পের মাধ্যমে এই চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান শুরু হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে।
প্রাথমিক ভাবে সুন্দরবনের দ্বীপগুলির মধ্যে ছ’টি বাজার এলাকাকে বাছা হয়েছে এই অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য। সপ্তাহের এক একদিন গোসাবা ব্লকের আমতলি, কুমিরমারি, ছোট মোল্লাখালি, সাতজেলিয়া, কচুখালি ও চণ্ডীপুর বাজার এলাকায় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই পরিষেবা সাধারণ মানুষকে দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথমে রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। তাঁদের রোগ অসুখ সংক্রান্ত বিষয় জেনে নিয়ে সেগুলি বিশেষ ভাবে তৈরি নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপে নথিভুক্ত করছেন।
এরপর সেই তথ্য পাঠানো হচ্ছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে। কলকাতা বা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বসে থাকা চিকিৎসকরা সেই তথ্য দেখে ভিডিও কলের মাধ্যমে রোগীর সাথে কথা বলছেন। এরপর রোগীকে প্রেস্ক্রিপশান লিখে দিচ্ছেন সেই চিকিৎসক। সাথে সাথেই স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই প্রেস্ক্রিপশান রোগীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন - পিসতুতো দাদার সঙ্গে পরকীয়া, স্বামীকে মাথা থেঁতলে খুন স্ত্রীর
এই ভাসমান ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রে রোগীদের জন্য ১৩ শতাংশ ছাড়ে ওষুধের ব্যবস্থা যেমন রাখা হয়েছে। তেমনি ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার, ইসিজি, হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা সহ আরও বেশ কিছু চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা থাকছে এই ভাসমান স্বাস্থ্য ক্যাম্পে। তবে এই স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নয়, খুবই সামান্য কিছু অর্থ এরজন্য রোগীদের ব্যয় করতে হবে বলে জানিয়েছে সংস্থা। এছাড়া প্রতিমাসে একদিন করে চিকিৎসকরা স্বশরীরে এই প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে গিয়ে নিজেরা রোগীদের সাথে কথা বলবেন, তাঁদেরকে স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শ দেবেন।