এনআরসি-র ভয়, পয়ত্রিশ বছর পর বাড়ি ফিরলেন হারিয়ে যাওয়া ফুল্টু

  • বীরভূমের মুরারইয়ের ঘটনা
  • তিন দশক আগে বাড়ি ছেড়েছিল কিশোর
  • পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না
  • এনআরসি আতঙ্কে অবশেষে বাড়িতে প্রত্যাবর্তন
     

আশিস মণ্ডল, বীরভূম: এনআরসি আতঙ্কে কাঁটা হয়ে আছেন অনেকেই। এনআরসি চালু হলে ভিটেছাড়া হতে হবে, এই আতঙ্কে বাংলাতেই একাধিক মানুষের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এবার এনআরসি আতঙ্কেই দীর্ঘ পয়ত্রিশ বছর বাদে বাড়ি ফিরে এলেন এক ব্যক্তি। এমনই ঘটনা ঘটেছে বীরভূম জেলার মুরারই গ্রাম পঞ্চায়েতের গুসকিরা গ্রামে।

বাড়ি ফিরে আসা ওই প্রৌঢ়ের নাম শুকতার আলি ওরফে ফুল্টু। হারিয়ে যাওয়া ফুল্টুকে এভাবে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তাঁর বাকি ভাই বোনেরা। এত বছর পরে ফুল্টু বাড়ি ফিরেছেন, সেই খবর পেয়েই তাঁর বাড়িতে ভিড় জমান পাড়া, প্রতিবেশীরাও। 

Latest Videos

ফুল্টুরা সাত বোন, দুই ভাই। ছোটবেলাতেই তাঁদের বাবা মারা যান। ফলে চরম দারিদ্রের মধ্যেই দিনযাপন করতে হত। পেটের দায়ে ছোট থেকেই রোজগারের খোঁজে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল কিশোর ফুল্টুকে। শেষ পর্যন্ত সতেরো বছর বয়সে রোজগারের জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন ফুল্টু। তার পর থেকে আর বাড়িমুখো হননি তিনি। প্রায় পয়ত্রিশ বছর আগে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া ভাইকে যে আবার দেখতে পাবেন, সে আশা ছেড়েছিলেন তাঁর অন্যান্য ভাইবোনেরা। 

আরও পড়ুন- ... এনআরসি আতঙ্কে বাংলাদেশও, মোদীর আশ্বাসবাণীতেও কাটছে না অস্বস্তি

আরও পড়ুন- নাগরিকপঞ্জী নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত, তালিকাছুটদের পাশেই নির্বাচন কমিশন

কিন্তু সোমবার সকালে হঠাৎই গুসকিরা গ্রামের বাড়িতে হাজির হন ফুল্টু। সেদিনের কিশোর তিন দশক পেরিয়ে আজ একজন প্রৌঢ়। চেহারার সঙ্গে মিল থাকলেও তিনিই যে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ফুল্টু, তা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত নিজেই নিজের পরিচয় দেন ফুল্টু। তিন দশক পর পুনর্মিলনে মুহূর্তে তখন কারও চোখের জলই বাঁধ মানেনি। 

ফুল্টু জানান, বাড়ি ছাড়ার পরে প্রথমে রাজস্থান যান তিনি। কিন্তু সেখানে বিশেষ সুবিধে করতে না পারায় চলে যান পঞ্জাবে। সেখানেও মহাজনের খপ্পরে পড়ে দিশেহারা অবস্থা হয় তাঁর। এর পর বেশ কয়েকটি রাজ্য় ঘুরে তিনি দুর্গাপুরে চলে আসেন। সেখানেই ঠিকাদারের অধীনে কাজ শুরু করে দু’পয়সার মুখ দেখতে পান তিনি। দুর্গাপুরেই বিয়ে করে সংসার পাতেন ফুল্টু। তাঁর দুই ছেলেমেয়েও রয়েছে। ভাইবোনেদের ভুলে নুন ভাত খেয়ে সুখেই চলছিল সংসার। কিন্তু এনআরসি আতঙ্কই শেষ পর্যন্ত তাঁকে ভাইবোনেদের কাছে ফিরিয়ে দিল। 

নিজের পৈর্তৃক ভিটেয় বসে ফুল্টু বলেন, 'ভেবেছিলাম আর বাড়ি ফিরব না। কিন্তু এনআরসিতে কাগজপত্র দেখাতে না পারলে দেশছাড়া হতে হবে, এই আতঙ্কেই বাড়ি
ফিরলাম। ফিরেই ভাইদের কাছ থেকে কাগজ পত্র চাইলাম। যাতে বোঝাতে পারি আমরা উদ্বাস্তু নই, আমরা ভারতীয়।' 

ফুল্টুর মা বছর দশেক আগে মারা গিয়েছেন। গুলকিরা গ্রামের বাড়িতে এখন ছোট ভাই এবং দুই বোন থাকেন। বাকি বোনেদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। হারানো দাদাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তাঁর ভাই, বোনেরা। ফুল্টুর ভাই মোক্তার আলি ওরফে লাল্টু বলেন, 'দাদাকে দীর্ঘদিন পর ফিরে পেয়েছি। আর হারাতে চাই না। আমি দুর্গাপুরে গিয়ে সবাইকে গ্রামে ফিরিয়ে আনব। যেটুকু আয় হবে তাই দিয়ে সবাই মিলে সংসার চালাব।'

হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশির হাওয়া গুসকিরা গ্রামেও।  গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম, প্রণতি দত্ত, আহাসান করিম, ক্ষুদিরাম দত্তরা বলেন, 'গ্রামের ছেলেকে এতদিন পর দেখতে পেলাম, আনন্দ তো হবেই। তবে ফুল্টুর চেহারায় খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।'

Share this article
click me!

Latest Videos

Sukhendu Sekhar কী বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে? জল্পনা উস্কে যা বললেন Agnimitra Paul
তন্ত্রযোগ? নাকি বৌমা ও ছেলেকে শিক্ষা দিতেই...আটক দাদু, ঠাকুমা ও জেঠিমা | Hooghly News Today
TMC ছেড়ে কেন BJP-তে শুভেন্দু! আজ নিজেই বলে দিলেন সব | Suvendu Adhikari | Bangla News
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু! তার আগেই বিরোধীদের কড়া বার্তা PM Modi | Parliament Winter Session 2024
'আমি বলছি, আমার নাম করে লিখে রাখুন' ঝাঁঝিয়ে উঠে যা বললেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari