শাজাহান আলি, পশ্চিম মেদিনীপুর: অসমে প্রকাশিত হয়েছে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা। নাম বাদ গিয়েছে ১৯ লক্ষেরও বেশি মানুষের। বিজেপি নেতারা হুমকি দিচ্ছেন, এবার এনআরসি চালু হবে বাংলাতেও। গত শনিবার অসমে ১৯ মানুষের নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ার পরেই আতঙ্কে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণার নীলগঞ্জের শতাধিক পরিবার। ওই পরিবারের সদস্যদের এখন একটাই চিন্তা, বাংলায় এনআরসি চালু হলে তাঁদের কী হবে?
পরিস্থিতি এমনই যে এনআরসি চালু হওয়ার আগেই ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তাভাবনা করছে পরিবারগুলি। কিন্তু কেন এতটা আতঙ্কে এই পরিবারগুলি? ১৯৭১ সালে ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে বহু পরিবার পশ্চিমবঙ্গে এসে তৎকালীন রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বসতি গড়তে শুরু করে। তাদের মধ্যে ত্রিশটি পরিবার এসে চন্দ্রকোণায় বসবাস শুরু করেছিল। বর্তমানে সেই এলাকার নাম নীলগঞ্জ কলোনি।
সেই সময় রাজ্য সরকারের রিফিউজি পুনর্বাসন কমিটি এই পরিবারগুলির হাতে একর করে খাস জমির কাগজ তুলে দেয়। কিন্তু আজও সেই জমির মালিকানা সরকারিভাবে নথিভুক্ত না হওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে পরিবারগুলির। প্রায় পাঁচ দশক আগে চন্দ্রকোণায় এসে বসবাস শুরু করা তিরিশটি পরিবার এখন সংখ্যায় বেড়ে প্রায় একশো পরিবারে পরিণত হয়েছে। তাদের কাছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থাকলেও সরকারি যাবতীয় সুবিধা থেকে তারা আজও বঞ্চিত ।
শনিবার অসমের নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পরে ঘুম ছুটেছে এই পরিবারের বাসিন্দাদের। তুষার সমাদ্দার,পারুল মণ্ডল, সুকান্ত মণ্ডল, প্রভাত বৈরাগীদের চোখ এখন অসমের এনআরসি নিয়ে টিভি বা সংবাদমাধ্যমের খবরে। বৃদ্ধ শুকলাল মণ্ডল বলেন, 'আমাদের কাছে শুধুমাত্র সেই সময়ে বাস্তুর কাগজ টুকুই সম্বল। কাগজ নিয়ে বারবার ভূমি দফতরের কাছে গিয়েছি, কিন্তু রেকর্ড করাতে পারিনি। তাই আজও আমরা উদ্বাস্তু হয়েই রইলাম। এনআরসি চালু হলে কীভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেব, অসমের ঘটনার পরে সেই দুশ্চিন্তাই আমাদের গ্রাস করেছে। আমরা তাই ঠিক করেছি, সকলে মিলে বিডিও- র দ্বারস্থ হব।'
এ বিষয়ে চন্দ্রকোণা ২ নম্বর ব্লকের বিডিও শ্বাসত প্রকাশ লাহিড়ী বলেন, 'ওঁরা আবেদন করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।' চন্দ্রকোণা বিধানসভার বিধায়ক ছায়া দুলুই আশ্বস্ত করেছেন, ওই পরিবারগুলিকে সবরকম সাহায্য করবে রাজ্য সরকার।