মঙ্গলবার বীরভূমের দেউচা পাচামির জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই সিঙ্গুরবাসীর গলায় উঠে আসে আক্ষেপের সুর। টাটা গোষ্ঠী ফিরে যাওয়ার পর বেকার পড়ে আছে সেখানকার জমি. বর্তমান সরকারের কাছে তাই তাদের কাতর আর্জি 'সিঙ্গুরে শিল্প হোক।'
সিঙ্গুরের ইতিহাস (Singur History) বাংলার মানুষের প্রায় সকলেরই জানা। সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে যে রাজনৈতিক চিত্র ফুটে উঠেছিল তা এই কয়েক বছরে এক ইতিহাস হয়ে রয়ে গেছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ অর্থাৎ সিঙ্গুরবাসী আজ কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে? একসময় এই সিঙ্গুরের মাটিতেই বিরাট শিল্পের স্বপ্ন দেখেছিলেন টাটা গোষ্ঠীর (Tata Group) কর্ণধার রতন টাটা (Ratan Tata)। আশ্বাস দিয়েছিলেন সিঙ্গুরবাসীর ভবিষ্যৎ গড়ার, সিঙ্গুরের ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার। তবে সেইসময় রাজি হন নি সিঙ্গুরবাসী। সেখানকার কৃষক মহল তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন চাষের জমিতে শিল্প গড়া নিয়ে। কোনোভাবেই আপস করতে রাজি হন নি সিঙ্গুরবাসী। ফলত শিল্প আর গড়ে ওঠে নি সিঙ্গুরে (Singur)। টাটা গোষ্ঠী ও ফায়ার গেছেন। তবে এত কিছুর পরেও চাষের জমিকে কি আদৌ বাঁচাতে পেরেছিলেন সিঙ্গুরবাসী? না ! সেখানে শিল্প গড়ে ওঠে নি ঠিকই তবে সেখানকার মাটিতে চাষও আর হয় না। সিঙ্গুরের সেই জমি আজ ও বেকার হয়ে পড়ে রয়েছে। আজ সিঙ্গুরবাসীর গলায় আক্ষেপের সুর, তারা চান সিঙ্গুরের মাটিতে শিল্প হোক। বর্তমান সরকারের কাছে তাঁদের কাতর আর্জি 'সিঙ্গুরের জমিতে ও কারখানা হোক। তাদের ঘরে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে বেকার হয়ে পড়ে আছে। এই জমিতে শিল্প হলে তারা অনেকটাই উপকৃত হবেন।'
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee: রাজ্য মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদল, অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন মমতা নিজেই
উল্লেখ্য, একসময় এই সিঙ্গুরের মাটি থেকেই ফিরে যেতে হয়েছিল টাটা গোষ্ঠীকে (Tata Group)। সিঙ্গুরের জমিতে শিল্প গড়ে ওঠা নিয়ে কীভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বঙ্গ রাজনীতি সেই স্মৃতি আজও টাটকা সকলের মনে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya) সিঙ্গুরের মাটি থেকে শিল্পের স্লোগান (Slogan of Industry) তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'কৃষি হবে আমাদের ভিত্তি, শিল্প হবে আমাদের ভবিষ্যৎ, সেই পথে এগোতেই হবে আমাদের।' কিন্তু সিঙ্গুরবাসী এই শিল্পে সম্মতি দেয় নি। সেইসময় সিঙ্গুরবাসীর সপক্ষে সিঙ্গুরে শিল্প গড়ে ওঠার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বলা বাহুল্য, সিঙ্গুরের সেই ইতিহাসই বাম যুগের (Left Front) পতন এবং তৃণমূল যুগের (TMC) উত্থানের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছিল। ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ, কর্মসংস্থানের আশ্বাস, এতকিছুর পরও, জমি আন্দোলনের জেরে ন্যানো গাড়ির প্রকল্প গুটিয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল টাটাদের। আজ সেই সিঙ্গুরেই শিল্প চান সেখানকার স্থানীয় মানুষ।
মঙ্গলবার, দেউচা পাচামির জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের একাংশের। এই প্রসঙ্গে অনুব্রত মন্ডল (Anubrata Mondal) অবশ্য বলেছেন যে, সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একথা প্রকাশ্যে আসতেই সিঙ্গুরবাসীর কাতর আবেদন যে 'সিঙ্গুরেও শিল্প হোক।' প্রসঙ্গত, দেউচা পাচামিতে কয়লা খনির জন্য জমি অধিগ্রহণের ঘোষণা করতে গিয়ে সিঙ্গুরের ইতিহাসের (Singur History) স্মৃতিচারণা করতে ছাড়েন নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন 'মনে রাখবেন সিঙ্গুরে যেভাবে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল আমরা সেভাবে করবো না।'