সংক্ষিপ্ত

রঙিন পোশাকে প্রাণহীন একটি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সত্যিই কি ফুলের মতো মেয়েটিও তালিবানি নির্মমতার শিকার? 
 

তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর থেকে ইসলামি কট্টরপন্থীদের নৃশংসতার অসংখ্য ভিডিও এবং ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকদের পেটানো, প্রতিবাদী আফগানদের উপর গুলি চালানো, হেলিকপ্টারে মৃতদেহ ঝুলিয়ে আকাশে চক্কর দেওয়ার মতো অনেক ভিডিও-ছবিই দেখা গিয়েছে গত কয়েকদিনে। সম্প্রতি আরও একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। রঙিন পোশাক পরা প্রাণহীন অবস্থায় শুয়ে থাকা একটি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ের ছবি। দাবি করা হচ্ছে ওই ফুলের মতো মেয়েটিও তালিবানি নির্মমতার শিকার। সত্য়িই কি তাই? কী করেছিল সে?

দাবি - সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ব্যবহারকারীই বলেছেন মেয়েটিকে হত্যা করেছে তালিবানরা। অনেকেই ছবিটি শেয়ার করে প্রশ্ন করেছেন, ছোট্ট এঞ্জেলটি কি করেছিল, যে তাকে তালিবানি অত্যাচারের বলি হতে হল? তবে কোনও প্রথম সারির আফগান মিডিয়ায় ই খবর প্রকাশিত হয়নি। তাই অনেকেই খবরটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। 

অনুসন্ধান - এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ছবিটির বিপরীত চিত্র অনুসন্ধান করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ছবিটি গত কয়েক মাসে বিভিন্ন দাবির সঙ্গে বেশ কয়েকবার ব্যবহার করা হয়েছে। আরও দেখা যায়, ছবিটি ইন্টারনেটে প্রথম েসেছিল ২০১৯ সালে।  পাকিস্তানের ফেডারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটেড ট্রাইবাল এরিয়াস বা ফাটা এলাকার স্থানীয় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল। সঙ্গের প্রতিটি প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ওই ছোট্ট মেয়েটি  ছয় বছর বয়সী লুবনা। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছিল।

তার বাড়ি ছিল, খাইবার পাখতুনখাওয়ার মোহমন্ড উপজাতীয় জেলার ইয়াক্কাহুন্ড তহসিলে। সাপে কামড়ানোর পর তাকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় শবকদার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সাপের বিষ-রোধী ইনজেকশন ছিল না। হাসপাতাল থেকে লুবনাকে পেশোয়ারে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। পেশোয়ার যাওয়ার পথেই লুবনার মৃত্যু হয়েছিল। এই নিয়ে প্রবল হইচই হয়েছিল। লুবনার বাবা অভিযোগ করেছিলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবই তার মেয়েকে হত্যা করেছে। #JusticeForLubna নামে অনলাইনে জনমতও তৈরি হয়েছিল। চাপের মুখে সরকার খাইবার পাখতুনখাওয়া স্বাস্থ্য বিভাগের চার চিকিৎসককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিল।

আরও পড়ুন - 'কাপড় ছুঁয়ো না' - তালিবান-বিরোধী প্রতিবাদে নেটদুনিয়ায় রঙ লাগালেন আফগান সুন্দরিরা, দেখুন

আরও পড়ুন - লো প্রোফাইল প্রধানমন্ত্রী, নির্মম জঙ্গি থেকে ধুরন্ধর প্রচারক - চিনে নিন নয়া তালিবানি সরকার

আরও পড়ুন - নাকে খত, লাথি, গ্রেফতার - বেনজির তালিবানি সন্ত্রাস নেমে এল সাংবাদিকদের উপর, দেখুন

সিদ্ধান্ত - কাজেই বোঝাই যাচ্ছে, এই ছবিটা সঙ্গে তালিবান বা আফগানিস্তানে বর্তমানে যা ঘটছে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে তার মানে এই নয়, যে তালিবানরা এরকম কিছু করতে পারে না। আফগানিস্তান থেকে প্রতিনিয়ত তালিবানি হত্যা এবং নির্যাতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেইসব খবর যাতে বহির্বিশ্বে না পৌছায়, তার জন্য সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ করার চেষ্টাও চলছে।