আর্থিক সংকটের মধ্যেই নতুন করে পেট্রোলের দাম বাড়ল পাকিস্তান। লিটার প্রতি ১০ টাকা বেশি দাম দিতে হবে পেট্রোলের জন্য। ডিজেলের দাম অপরিবর্তিত।
চলমান আর্থিক সংকটের মধ্যেই আবার দুঃসংবাদ। নতুন করে লিটার প্রতি আরও ১০ টাকা দাম বাড়ল পেট্রোলের। আকাশ ছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেই নতুন করে নাগরিকদের ওপর আরও বোঝা চাপাল পাকিস্তান সরকার। বর্তামানে পাকিস্তানে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ২৮২ টাকা।
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার শনিবার গভীররাতে লাইভ ভাষণে ঘোষণা করেন, ডিজেলের দাম অপরিবর্তিত থাকছে । ডিজেল ও হালকা ডিজেলের দাম যথাক্রমে ২৯৩ টাকা ও ১৭৪.৬৪ টাকা। কেরোসিনের দাম এই কয়েক দিনে লিটার প্রতি ৫.৭৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮৬.০৭ টাকা। রবিবার বেলা ১২টা থেকেই কার্যকর হবে। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন গত ১৫ দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির কারণে পাকিস্তানে নতুন করে তেলের দাম বাড়াতে তাঁর সরকার বাধ্য হয়েছে। আর সেই কারণেই পেট্রোলের মূল্যের এই সংশোধন। অর্গানাইজেশন অফ পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (OPEC+) এই মাসের শুরুতে তারা উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর তেলের দাম বেড়েছে।
ঋণে জর্জরিত পাকিস্তান ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দেশটিকে দেউলিয়া হওয়ার থেকে আটকানোর জন্য ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেলআউট প্যাকেজ দিয়েছে। কিন্তু তাতেই পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থার তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। যদিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানিয়েছেন দেশের সেনা প্রধান জেনারেল আসিন মুনির সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর থেকে নগদ জোগাড় করার চেষ্টা করছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার ভারতের পথেই হাঁটল পাক-প্রশাসন। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার পাকা বন্দোবস্ত করল নওয়াজ শরিফ সরকার। জুন মাস থেকেই রাশিয়ার তেলেই জীবন ফিরে পাওয়ার আশা করছে পাকিস্তান। নগদ সংকটে পড়ে পাকিস্তান আগামী মাসে রাশিয়ান থেকে অপরিশোধিত তেল কিনবে। মে মাসেই রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের জন্য প্রথম অর্ডার দেবে। পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী মুসাদিক মালিক জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রচুর বিদেশি ঋণ আর নগদের তীব্র সংকটে ধুঁকছে পাকিস্তান। এই অবস্থায় রাশিয়া থেকে সস্তা ও অনেক বেশি ছাড়ে অপরিশোধিত তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পাকিস্তানের খাদ্য দফতর জানিয়েছেন দেশে ময়দার তীব্র সংকট। ময়দা বা আটার মিলগুলি আর্থিক অনটকের কারণে প্রায় বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। খাইবার , পাখতুনখোয়া, সিন্ধ, বেলুচিস্তান-সহ কয়েকটি এলাকায় রীতিমত বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। একাধিক জায়গায় খাবারের সন্ধানে মানুষ পদদলিত হয়ে মারা গেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ বাজারে ভিড় করে ভর্তুকির আটার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। দিনের অধিকাংশ সময়ই ভর্তুকির আটা সংগ্রহ করার জন্য খরচ করছে। দেশের ক্রমবর্ধমান আর্থিক সংকটের মধ্যে গম ও আটার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। জানুয়ারির রিপোর্ট অনুযায়ী করাচিতে এক কেজি গমের দাম ছিল ১৬০টাকা। সেখানে ইসলামাবাদ, পেশোয়ারে ১০ কেটি আটা বিক্রি হয়েছে ১৫০০ পাক- টাকায়। শুধুমাত্র আটা বা ময়দা নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের দামও বেড়েছে হুহু করে। মাছ মাংস ,দুধ , তেল - সব কিছুরই দাম আকাশ ছোঁয়া। রোজা, ইফতারের মধ্যেই পাকিস্তানের খাবারের দেখা দেওয়ায় রীতিমত ক্ষোভ বাড়ছে সে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে।