খানাকুল , উত্তম দত্ত : খানাকুলের রাজহাটি গ্রামে চারশো বছরেরও বেশী পুরোনো এই বনেদী বাড়ীর দুর্গা পুজো। পরিবারের কুলদেবী সিংহ বাহিনী দুর্গা রূপে পুজিত হন অষ্টধাতুর মূর্তি। তাই এই মূর্তি বিসর্জন হয় না। বিসর্জন হয় দেবীর পাদমূলের বিল্বপত্র। পারিয়ালদেরই একটি পুকুরে , পরিবারের সদস্যরা এই বিল্বপত্র মাথায় করে শোভাযাত্রা সহকারে নিয়ে যান এবং বিসর্জন দেন। প্রায় দেড়শো জন পরিবারের সদস্য এই বিল্বপত্র মাথায় করে নিয়ে যান। আর সঙ্গে থাকে নহবত। খানাকুলের হীরাপুর গ্রাম থেকে আসে এই নহবত। এটাই চলে আসছে যুগ যুগান্তর ধরে। এই শোভাযাত্রা দেখতে ভীড় করেন হাজার হাজার দর্শনার্থী।
এই অতিমারির কারণে সব কিছুতেই রাশ টানতে চাইছেন পারিয়াল পরিবার। তাই জমিদার বাড়ীর মূল ফটক সংকুচিত করে সীমিত ভাবে দর্শনার্থীদের প্রবেশের কথা ভেবে রেখেছেন তাঁরা। মূল দ্বারে স্যানিটাইজেশন করিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করানো হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। খানাকুলের পারিয়াল জমিদার বাড়ীর অন্যতম একটি রীতি রয়েছে। আর তা হল প্রতিবার পুজোয় 'দুগ্গা চচ্চড়ি' খাওয়া। পুজোর সময়ে আশেপাশের গ্রামের লোকেদেরও খাওয়ানো হয় এই মহাভোগ। আর এই দুগ্গা চচ্চড়ি খেতে প্রচুর লোক ভীড় করেন পারিয়াল জমিদার বাড়ীতে। কিন্তু করোনা আবহে আর সেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না পারিয়াল পরিবার ।
কিন্তু ' দুগ্গা চচ্চড়ি' টা কি? ওই জমিদার বাড়ীর বংশধর রাজীব পারিয়াল বললেন , এই দুগ্গা চচ্চড়ির মূল উপকরণ হলো কচু এবং ঘুসো চিংড়ি। আমরা দশমীর দিন দুপুরে গ্রামের বাসিন্দাদের নিমন্ত্রণ করি। ভাত , ডাল , মাছের সঙ্গে এই এই দুগ্গা চচ্চড়ির উপকরণ থাকবেই। সারা বছরের মধ্যে এই পুজো উপলক্ষে আমরা পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হই। আমরাও সবাই খাই আর গ্রামবাসীরাও এই ভোগ নিতে আসেন। এটা প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসছে বংশপরম্পরায় । কিন্তু খারাপ লাগছে, এই বারে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এই প্রথম আমরা দুগ্গা চচ্চড়ির ব্যাপারটা আমাদের পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবো। অর্থাৎ সেই প্রসাদ আর বহিরাগতদের বিরতণ করা হবে না।