বিজেপির সেরা স্ট্রাইকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
একের পর এক নির্বাচনে তাঁর স্ট্রাইক রেট তাক লাগানো
২০২১ সালের বঙ্গ নির্বাচনে কিন্তু সেই নাম ধরে রাখতে পারলেন না
এবার তাঁর স্ট্রাইক রেট মাত্র ২৫ শতাংশ
রক্তের গন্ধ পাওয়া বাঘের মতো লোকসভা নির্বাচনের পরই বাংলার ক্ষমতার গন্ধ পেয়েছিল বিজেপি। জেপি নাড্ডা, অমিত শাহরা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিয়েছিলেন প্রায় ৬ মাস আগে থেকে। প্রায় শেষ লগ্নে ময়দানে নামানো হয়েছিল তাদের সেরা স্ট্রাইকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। একের পর এক নির্বাচনে তাঁর স্ট্রাইক রেট তাক লাগানোর মতো। কিন্তু, ২০২১ সালের বঙ্গ নির্বাচনে কিন্তু, নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না তিনি। হিসাব বলছে নির্বাচন ঘোষণারও আগে থেকে বাংলায় প্রচার শুরু করেছিলেন তিনি। বলতে গেলে কোনও জেলাই বাদ রাখেননি। ১৪ বার বাংলায় এসে মোট ২০টি নির্বাচনী প্রচার সভা করেছেন তিনি। কিন্তু, তাঁর এই প্রচার কতটা লাভ এনে দিয়েছে গেরুয়া শিবিরে? আসুন দেখা যাক -
বাংলার নির্বাচনে প্রথম সভাটি প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন গত ৭ ফেব্রুয়ারি। তখনও নির্বাচনের দিনই ঘোষণা হয়নি। সভাটি হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায়। সেখান থেকে কিন্তু, জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী তাপসী মণ্ডল।
এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি, তিনি সভা করেছিলেন হুগলি জেলার সাহাগঞ্জে। এই জেলায় লোকসভা ভোটের নিরিখে ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিতে এগিয়েছিল বিজেপি। তাই এবার এখানে ভালো ফলের আশা করেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু, খানাকুল, আরামবাগ ও পুরশুরা আসন ছাড়া একটিতেও জিততে পারেননি বিজেপি প্রার্থীরা। হার হয়েছে লকেট চট্টোপাধ্য়ায়, স্বপন দাশগুপ্তদের মতো হেভিওয়েটদেরও।
এরপর ৭ মার্চ, কলকাতার বুকে ব্রিগেডে ময়দানে বিরাট জনসভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সভায় বিপুল লোক হলেও, কলকাতার ১১টি আসনের একটিতেও পদ্মফুল ফোটেনি।
১৮ মার্চ মোদী সভা করেছিলেন পুরুলিয়ায়। বাংলায় বিজেপির এই নতুন উত্থানের সূচনাই হয়েছিল এই জেলায়। সেই নিরিখে পুরুলিয়ায় বিজেপির ফল ভালো হয়েছে বলা যাবে না। ২০১৯ সালে এই জেলার সবকটি আসনই প্রায় গেরুয়া শিবিরের দখলে ছিল। এইবার কিন্তু, সেই রামরাজত্বে ভাগ বসিয়েছে তৃণমূল। বাঘমুন্ডি, মানবাজার, বান্দোয়ানে ফুটেছে ঘাসফুল।
২০ মার্চ মোদী সভা করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে। এই আসনে কিন্তু জয়ী হয়েছেন বিজেপির তারকা প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
এরপর প্রধানমন্ত্রী ২১ মার্চ সভা করেছিলেন বাঁকুড়ায় এবং ২৪ মার্চ সভা করেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে। বাঁকুড়ায় বিজেপি প্রার্থী নিলাদ্রীশেখর দানা কাঁথি উত্তরে সুমিতা সিনহা এবং কাঁথি দক্ষিণে জয়ী হয়েছেন অরূপ কুমার দাস।
এরপর ১ এপ্রিল তৃতীয় দফা নির্বাচনের দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মথুরাপুর লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা এলাকার সবকটিতেই কিন্তু জয়য়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। একইভাবে উলুবেরিয়া লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা আসনেই পরাজিত হয়েছেন গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা।
৩ এপ্রিল, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সোনারপুরে সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের মতোই সোনারপুর উত্তর ও দক্ষিণ - দুই কেন্দ্রেই ধরাশায়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা।
এরপর, ৬ এপ্রিল, কোচবিহার এবং হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে দুটি জনসভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কোচবিহার উত্তর ও দক্ষিণ দুই কেন্দ্রেই বিজেপি প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। কিন্তু, রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মতো দাপুটে নেতা থাকা সত্ত্বেও, হাওড়া জেলায় একটিও আসন পায়নি বিজেপি।
এরপর পঞ্চম দফা নির্বাচনের দিন রাজ্যের দুই প্রান্ত - শিলিগুড়ি এবং কৃষ্ণনগরে দুটি সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। শিলিগুড়ি আসনে অবাক করা জয় এনে দিয়েছেন সদ্য সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে আসা নেতা শঙ্কর ঘোষ। কৃষ্ণনগর উত্তরে মুকুল রায় মানরক্ষা করলেও দক্ষিণে জয়ী হয়েছেন বিদায়ী মন্ত্রী তৃমমূলের উজ্জ্বল বিশ্বাস।
১৩ এপ্রিল একদিনে তিনটি সভা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী - পূর্ব বর্ধমানের তালিত-এ, নদীয়ার কল্যাণীতে এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতে। পূর্ব বর্ধমান জেলাতে একটিও আসন জোটেনি বিজেপির। কল্যানীতে পদ্ম ফুটলেও বারাসাতে হার হয়েছে গেরুয়া শিবিরের।
১৭ এপ্রিল শেষ বার নির্বাচনের প্রচারে বাংলায় পা পড়েছিল নরেন্দ্র মোদীর। পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে দুটি সভা করেছিলেন তিনি। একমাত্র কুলটি ছাড়া বাবুল সুপ্রিয়োর জেতা আসানসোল লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা আসনের আর একটিতেও জিততে পারেনি বিজেপি। দক্ষিণ দিনাজপুরও খালি হাতে ফিরিয়েছে বিজেপিকে।
এরপর কোভিড মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গের জন্য শারীরিক ভাবে উপস্থিত না থাকলেও একটি ভার্চুয়াল সম্মেলন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রোতা ছিল বীরভূম, কলকাতা, মালদা ও মুর্শিদাবাদের জনতা। আগেই বলা হয়েছে কলকাতায় কোনও আসন পায়নি বিজেপি। বীরভূম মুর্শিদাবাদেও দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে গেরুয়া রঙ। তবে মালদায় বেশ ভালোই ভোট পেয়েছে বিজেপি।
আরও পড়ুন - গ্লুকোজ পাউডার দিয়ে 'নকল রেমডিসিভির', মোদী-রাজ্য থেকে ধৃত বড় সড় জালিয়াতি চক্র
আরও পড়ুন - দেশে মোদী বিরোধী প্রধান মুখ হলেন মমতা, এক পায়ে বাংলা জেতার পর এবার কি দুই পায়ে দিল্লি
আরও পড়ুন - আর ভোট-কুশলী হিসাবে কাজ করবেন না প্রশান্ত কিশোর, বাংলার ফল বের হতেই বিরাট ঘোষণা
কাজেই দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর মাত্র ৮টি সভা বিজেপির পক্ষে কাজে দিয়েছে। বাকি সভাগুলি মানুষের মনে পদ্ম ফোটাতে ব্যর্থ। তাই অঙ্কের হিসাব বলছে বঙ্গ ভোটে নরেন্দ্র মোদীর স্ট্রাইকরেট মাত্র ০.৪ বা মাত্র ২৫ শতাংশ।