মিহিদানার পর এবার পালা সীতাভোগের, বাংলার মিষ্টি পাড়ি দিল মধ্যপ্রাচ্যে

সীতাভোগ বাসমতীর চালের ভাতের মত দেখতে লম্বা সরু সরু দানাযুক্ত হয়। এর সঙ্গে ছোট ছোট গোলাপজাম এবং কখনো কখনো কাজুবাদাম ও কিশমিশ মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।

Parna Sengupta | Published : Oct 5, 2021 6:06 AM IST

বাংলার প্রাণের মিষ্টির (Sweets Of Bengal) বিদেশ সফর (Foreign Tour)। গত মঙ্গলবার বর্ধমানের (Burdwan) শতাব্দী প্রাচীন রাজঐতিহ্যবাহী মিহিদানা (Mihidana) পাড়ি দিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের (Middle East) বড় দ্বীপ বাহরাইনে। আর তার ঠিক এক সপ্তাহ পর এবার বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েটসের (Traders Welfare Associates of Burdwan) উদ্যোগে মঙ্গলবার সকালে ভিনদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল সীতাভোগ (Sitabhog)। 

সীতাভোগ এণ্ড মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েটসের সহসম্পাদক সৌমেন দাস বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে বাইরাইনে গেছে মিহিদানা। সেখানে মিহিদানা খেয়ে মানুষজন খুবই উচ্ছ্বসিত। তাই এবার বর্ধমান থেকে একটি বাক্সে ২০০ গ্রাম সীতাভোগ ও ২০০ গ্রাম করে মিহিদানা মোট ৩০টি বাক্স যাবে। একেবারে গাওয়া ঘি দিয়ে তৈরী জিআই ট্যাগযুক্ত মোট ১২ কেজি সীতাভোগ পাড়ি দেবে হামাদ বিন ঈসা আল খলিফার রাজ্য বাহরাইনের দ্বীপে আলজাজিরার একটি স্টোরে। 

শচীন থেকে শাকিরা, প্যান্ডোরা পেপার্সে ফাঁস রাঘব বোয়ালদের আর্থিক গোপন লেনদেন

মঙ্গলবার সকালে এটি প্রথমে পৌঁছাবে বর্ধমান থেকে কলকাতায় সরকারী দপ্তর এপেডার কাছে। এখানে উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানা জি আই স্বীকৃতি পাওয়ার পর ভারতীয় ডাক বিভাগ স্পেশাল কভারেজ দিয়েছে মাস দুয়েক আগে এই দুটি মিষ্টিকে। ভারতীয় ডাক বিভাগের উদ্যোগে বাজারে ছাড়া হয়েছে সীতাভোগ মিহিদানাকে নিয়ে বিশেষ খাম।

খুশির খবর, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পুজোর আগেই চালু নতুন শিল্প, মিলবে প্রচুর চাকরি

কথিত আছে ১৯০৪ সালে বর্ধমানের রাজা বিজয়চন্দ মহাতাবকে রাজাধিরাজ উপাধি দেয় ইংরেজ সরকার। সেই উপলক্ষ্যে বর্ধমান রাজপ্রাসাদে এক বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বাংলার তৎকালীন বড়লাট লর্ড কার্জন বর্ধমান সফরে আসেন। বড়লাটকে খুশি করার জন্য এবং অনুষ্ঠানকে আরও বিশেষ মাত্রা দেওয়ার জন্য বর্ধমানের রাজা বিজয়চন্দের নির্দেশে দুটি একদম নতুন মিষ্টি তৈরি হয়—সীতাভোগ আর মিহিদানা। 

নতুন দুই মিষ্টির স্বাদ পেয়ে বড়লাট-সহ বাকি অতিথিরা খুব খুশি হয়ে ছিলেন বলে জানা যায়। বিজয়চাঁদ মহতাব বর্ধমানের জনপ্রিয় মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগকে একটি বিশেষ মিষ্টি প্রস্তুত করতে বলেন। ভৈরবচন্দ্র নাগ মিহিদানা ও বর্ধমানের অপর বিখ্যাত মিষ্টান্ন সীতাভোগ তৈরী করেন। ভৈরব নাগের আদিবাড়ি ছিল  পূর্ববর্ধমানের খণ্ডঘোষের সাঙঘাটগোলা গ্রাম। নাগেরা ছিলেন রাজাদের খাস মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক। 

আপনার সন্তান কবে ভ্যাকসিন পাবে, কোন শিশু আগে পাবে টিকা, তালিকা দিল কেন্দ্র

সীতাভোগ তৈরির প্রধান উপাদান সীতাসের প্রজাতির গোবিন্দভোগ চাল।  সীতাসের প্রজাতির গোবিন্দভোগ চাল থেকে প্রস্তুত হওয়ার কারণেই সীতাভোগের একটি নিজস্ব স্বাদ ও সুগন্ধ হয়। এই চাল গুঁড়ো করে তাতে ১:৪ অনুপাতে ছানা মিশিয়ে পরিমাণমত দুধ দিয়ে মাখা হয়। তারপর একটি বাসমতী চালের আকৃতির মত ছিদ্রযুক্ত পিতলের পাত্র থেকে ওই মিশ্রণকে গরম চিনির রসে ফেলা হয়। এর ফলে সীতাভোগ বাসমতীর চালের ভাতের মত দেখতে লম্বা সরু সরু দানাযুক্ত হয়। 

এর সঙ্গে ছোট ছোট গোলাপজাম এবং কখনো কখনো কাজুবাদাম ও কিশমিশ মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। তবে 'সীতাভোগ' নামটি নিয়ে বেশ দ্বন্দ্ব আছে পণ্ডিতমহলে। সুকুমার সেনের মতে, বানানটি হওয়া উচিত 'সিতাভোগ', 'সিতা' অর্থে সাদা। আবার 'সিতা'-র মানে মিছরিও হয়, তাই সাদা রঙের মিছরির মতন যে মিষ্টি বর্ধমান রাজবাড়ির হালুইকররা বানালেন, তার নাম হয়ে গেল 'সিতাভোগ'।

"

Share this article
click me!