মঙ্গলবার সন্ধে থেকেই তাই মনখারাপ চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। ভেজা চোখেই প্রতি বারের মতো এ বছরেও পুজো শেষে মন্ত্র পড়ে দেবীর ঘট নাড়ানো হয়েছে। ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে লাল সুতোর বাঁধন। দর্পণে ভেসে উঠেছে দেবীমুখ। অর্থাৎ, রীতি মেনে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন। প্রতি বছরই এটাই সুদীপা চট্টোপাধ্যায়-অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজোর চেনা ছবি।
বন্ডেল রোডের পুষ্পাঞ্জলি আবাসনের ছাদে মণ্ডপ। ইতঃস্তত ছড়িয়ে বসে অতিথিরা। প্রতি বছরই এটাই সুদীপা চট্টোপাধ্যায়-অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজোর চেনা ছবি। গত দু’বছরে অতিথির সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত ছিল। কারণ, করোনা। এ বছরে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অঙ্কুশ হাজরা, ঐন্দ্রিলা সেন, রাহুল দেব বসু-সহ ঝাঁকে ঝাঁকে তারকা। প্রতিটি দিন যেন ডানা মেলে উড়ে গিয়েছে। বুধবার দশমী। মঙ্গলবার সন্ধে থেকেই তাই মনখারাপ চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। ভেজা চোখেই প্রতি বারের মতো এ বছরেও পুজো শেষে মন্ত্র পড়ে দেবীর ঘট নাড়ানো হয়েছে। ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে লাল সুতোর বাঁধন। দর্পণে ভেসে উঠেছে দেবীমুখ। অর্থাৎ, রীতি মেনে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন।
ফুলের পাশাপাশি সুদীপা-অগ্নিদেবের প্রতিমা সেজে ওঠেন নানা ধরনের সোনার গয়নায়। যেমন, মায়ের নাকে জ্বলজ্বল করে বাংলাদেশের কমল হিরে। বুক জুড়ে রুপোর অহেন বর্ম। চট্টোপাধ্যায় পরিবারে দেবী আসেন যুদ্ধ-সাজে। তাই এই বিশেষ অলঙ্কার। এ ছাড়া, গলা থেকে পা পর্যন্ত দোলে সীতাহার। আছে ভিক্টোরিয়া আমলে তৈরি জড়োয়ার ময়ূর কণ্ঠহার। আর প্রতি বছর সকলেই কিছু না কিছু অলঙ্কার দেবীকে উপহার দেন। দেবীর বাহন সিংহও সেজে ওঠে সোনার মুকুটে!
বিসর্জন প্রসঙ্গে সুদীপা জানিয়েছেন, দশমীতে সবচেয়ে বেশি মনখারাপ অগ্নিদেবের। পরিচালক নিজে মাকে বিদায় জানালে তবে মায়ের প্রতিমা নড়ানো যায়। এই নিয়ে নাকি অলৌকিক ঘটনাও ঘটেছে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে। জি বাংলার ‘রান্নাঘর’-এর কর্ত্রীর মতে, প্রতি বছর দশমীতে বরণের পরে প্রতিমার সামনে জানু পেতে বসেন অগ্নিদেব। বুকের কাছ হাত জড়ো। পুজোয় কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটলে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। তার পরেই দেবী মাকে পরের বছর আবার আসার আমন্ত্রণ জানান। বলেন, ‘‘আবার এসো মা।’’ এ ভাবেই দেবীর বিদায় হয় চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে।
আরও পড়ুন-কেমনভাবে সেজে উঠবেন বিজয়া দশমীর বিদায়বেলায়? রইল হালকা সাজের টিপস
আরও পড়ুন-বিজয়া দশমীতে সকলকে জানান শুভেচ্ছা, রইল ১০টি আকর্ষণীয় শুভেচ্ছা বার্তার হদিশ
এক বছর নিমন্ত্রণ জানাতে ভুলে গিয়েছিলেন অগ্নিদেব। সুদীপার দাবি, সে বছর কেউ কিছুতেই দেবীপ্রতিমা নাড়াতে পারেননি! শেষে তাঁর স্বামী হাত জোড় করে হাঁটু মুড়ে ফের বসেন প্রতিমার সামনে। রীতি মেনে নিমন্ত্রণ জানান তাঁকে। অবাক কাণ্ড, তার পরেই নড়ে ওঠে দুর্গার কাঠামো। সকালে শাস্ত্রমতে বিসর্জন। বিকেলে রীতি মেনে প্রতিমাকে সিঁদুর খেলে বরণ করেন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সমস্ত মহিলারা।