এ বছরে সাবেকিয়ানা আমার হাতিয়ার। বিশেষ করে অষ্টমীতে। লাল-সাদার উপরে ডিজাইনার শাড়ি-ব্লাউজ। ক্রুশ বা হাকোবা কাজ থাকবে ব্লাউজে। মাঝে সিঁথি কেটে তুলে খোঁপা বাঁধব।
গায়ের রং-এর জন্য কত কথাই না শুনতে হয় ধারাবাহিক ‘দেশের মাটি’র ‘নোয়া’ ওরফে শ্রুতি দাসকে। দর্শক, পরিজন, প্রতিবেশি— কেউ ছাড়ে না। তাঁর মা কিন্তু মেয়ের মধ্যে খুঁজে পান স্থানীয় জাগ্রত দেবী ‘খেপি মা’কে। পুজোর আগে যদিও এই শ্যামলা বরণই নায়িকার বাড়তি পাওনা। ছোট পর্দায় তিনি দশমহাবিদ্যার অন্যতম দেবী কালিকা। এশিয়ানেট নিউজ বাংলায় তিনিই ‘কৃষ্ণকলি’। দিলেন, কালো মেয়েদের রূপসজ্জার পরামর্শ--
সাজ দেখে ভুলবেই...
ছোট থেকে বড় হয়েছি ‘কালো মেয়ে’ শুনতে শুনতে। কষ্ট হত। তার থেকেও বেশি অস্বস্তি, মন খুলে সাজতে পারি না। একটু বড় হয়ে নিজেই বুঝলাম, ভারতীয় ত্বকে সব রং খোলে না। ইচ্ছেমতো সাজতে গিয়ে নিজেকে অন্যের চোখে ‘বেমানান’ করে তোলা কি আদৌ উচিত? সে দিন থেকেই রং বাছতে শুরু করেছি। সেই বাছা রঙের পোশাক পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছে আমার মতো যাঁদের গায়ের রং তাঁদের জন্য বেশি উজ্জ্বল রং নয়। ইচ্ছে হলেও নিয়ন রং আমাদের নয়। বরং ভীষণ ক্যাটকেটে লাগে। বদলে নরম রং বাছলে সেটা ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়। আমরা উজ্জ্বল হয়ে উঠি।
তার পরেও নিয়নের উপরে আমার বড় লোভ! ভেবেছিলাম, এ বারের পুজোয় ফটোশ্যুট করব নিয়ন রঙের পোশাকে। কারণ, ফর্সাদের এই রঙের পোশাকে দেখাই যাক। শ্যামলা এই সাজে সাজলে কেমন লাগে? এটাই হবে আমার অগ্নিপরীক্ষা। এ বছর বিশেষ কারণে হয়ে ওঠেনি। আসছে বছর অবশ্যই হবে।
সাবেক লুকে কৃষ্ণকলি...
রঙের মতোই পোশাক আরও একটি বড় ব্যাপার। পুজোয় আমি কিন্তু পাশ্চাত্য পোশাকের ধারেপাশে নেই। তথাকথিত অফ শোল্ডার গাউন, খাটো স্কার্ট আলমারিতে। আমার পুজোর সকাল হয় সালোয়ার নয় শাড়িতে। পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারের অফিসে দুর্গাপুজো হয়। নিজের হাতে মাকে সাজাই। নিজেও সেজে উঠি তাতঁ, সিল্ক, সাবেকি শাড়িতে। এ বছর সালোয়ারকেও ছুটি দেব। কারণ, প্রতি বছর আমার লুকে কিছু না কিছু নতুনত্ব থাকে। এ বছরে সাবেকিয়ানা আমার হাতিয়ার। বিশেষ করে অষ্টমীতে। লাল-সাদার উপরে ডিজাইনার শাড়ি-ব্লাউজ। ক্রুশ বা হাকোবা কাজ থাকবে ব্লাউজে। মাঝে সিঁথি কেটে তুলে খোঁপা বাঁধব। চুলে জড়িয়ে থাকবে জুঁই ফুলের মিঠে গন্ধ। কপালে আড়াআড়ি সিঁদুর টিপ। এ বছরের সব গয়না অক্সিডাইজড। সবাই যখন সোনার গয়না বাছবে আমি সেখানেও ব্যতিক্রম!
সারা দিন অতিথির আনাগোনা। দিনভর ব্যস্ততা। বিকেলে সে সব মিটলে সন্ধেয় হয়তো ছবি দেখতে যাব। কিংবা মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী প্রতিমা দর্শন। তখন আর শাড়ি নয়। বেছে নেব হালকা কোনও পোশাক। যেমন, পালাজো আর ক্রপ টপ। কিংবা শার্টের সঙ্গে লং স্কার্ট, ক্যাজুয়াল ট্রাউজার্স বা ও রকমই কিছু। চুল তখন খোলাই থাকবে। নয়তো তুলে মেসি বান বা টপ নট।
চোখে চোখে সর্বনাশ...
জানেন তো, শ্যামলা মেয়েদের চোখ ভীষণ সুন্দর হয়। ‘কৃষ্ণকলির কালো হরিণ চোখ’ই না হয় এ বছরের পুজোর ফ্রেমে জ্বলে উঠুক। আমি কাজল পরতে ভীষণ ভালবাসি। মা বলেন, বড় চোখে নাকি লাইনার বেশি খোলে। আমি তাই দুটোই পরি। আই শ্যাডো সাধারণত এড়িয়েই চলি। কারণ, বড় চোখে বেশি মেকআপ ভাল লাগে না। নিজস্ব সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে যায়।
তাই যাঁদের চোখ বড়, টানা, গভীর তাঁরা নিজেদের সঁপে দিন কাজল, কোহল, লাইনারে। পুজোয় চোখে চোখেই সর্বনাশ হবে। লিপস্টিকের তালিকায় আমি রাখি পিচ। যে কোনও ন্যুড শেড আমার পছন্দ। এবং ম্যাট ফিনিশ হতে হবে। আমি সাধারণত দু-তিনটে লিপস্টিক মিলিয়ে পরি।
আরও পড়ুন-
কেউ তুলে নিয়েছেন ত্রিশূল তো কারোর হাতে কাশফুল, 'আগমনী'-র ফোটোশ্যুটে চিনে নিন টলিপাড়ার 'উমা'-দের
স্বস্তিকার ন্যুড লিপস না সৌরভের দাড়ি! পুজোয় কী নিয়ে কাড়াকাড়ি? জানাচ্ছেন রূপসজ্জা বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ চন্দ
কাঁচা-পাকা চুলের সহাবস্থান, ‘সল্ট অ্যান্ড পেপার’ লুকেই বাজিমাত পুজোয়! পরামর্শে ট্রাইকোলজিস্ট বব