৬০ দশকের শেষের দিকে কলকাতা ও লন্ডনের মধ্যে চলাচল করত একটি বাস। যাকে সবাই একডাকে 'অ্যালবার্ট' বলে চিনত। ডাবল ডেকার এই বাস দেখতে ছিল যেমন চমৎকার আর ভাড়াটাও নেহাত কম স্মার্ট ছিল না। পাউন্ডের হিসাবে ৮৫। আর তখন ভারতীয় মুদ্রায় এই ঐতিহাসিক বাসরুটের ভাড়া ছিল ৭,৮৮৯ টাকা। যাত্রীরা সেই সময় এতটা পরিমাণ অর্থ খরচ করেই এই বাসে জায়গা পেতেন।
আরও পড়ুন, বৈঠকে একাধিক প্রস্তাব মালিক সংগঠনের, বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি আশ্বাসে রাস্তায় নামছে বাস
'অ্যালবার্ট' নামের ওই ডাবল ডেকার বাসটি শুধু লন্ডন-কলকাতা পর্যন্ত গিয়েছিল এমনটা নয়। কলকাতা থেকে অ্যালবার্ট পাড়ি জমিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতেও। কলকাতা ও লন্ডনের মধ্যে অ্যালবার্টের ১৫টি ট্রিপ-এর রেকর্ড রয়েছে। আর লন্ডন থেকে সিডনি পর্যন্ত ৪টি ট্রিপ-এর রেকর্ডও রয়েছে। কোন পথে লন্ডন থেকে কলকাতায় আসত অ্যালবার্ট? সেই রুটটির তথ্যও সামনে এসেছে- লন্ডন থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথমে বেলজিয়ামে প্রবেশ করত। সেখান থেকে পশ্চিম জার্মানি হয়ে বাসটি অ্যালবার্টের নেক্সট ডেস্টিনেশন থাকত অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা। এরপর একে একে যুগোস্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক হয়ে অ্যালবার্ট প্রবেশ করত ইরানে। সেখান থেকে আফগানিস্তানের ভিতর দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে ভারতীয় ভুখণ্ডে প্রবেশ করত অ্যালবার্ট। ভারতে প্রবেশ করার পর অ্যালবার্টের প্রথম স্টপ ছিল দিল্লি। এরপর আগ্রা। তারপরে ইলাহাবাদ এবং বেনারস। অবশেষে কলকাতায় এসে থামত অ্যালবার্ট। সম্প্রতি অ্যালবার্টের পরিষেবার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে ভিক্টোরি স্টেশনের সামনে অ্যালবার্টকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
যাতে একটানা সিটে বসতে না হয় , তাই ভিতরে অ্যালবার্টের ডাবল ডেকার বডির ভিতরে অনেকটাই হাল ফ্য়াশানের ক্য়ারাভ্য়ানের স্টাইলে গদিওয়ালা লম্বা সিটের পাশেই ছিল বড়সড় জানালা। চলাচল করার জন্য অনেকটা জায়গা। জুতো ডেবে যাবে, মেঝেতে এমন দামি কার্পেট। ছিল বই পড়ার জায়গা। তবে শুধু ঘোরানো নয় ছিল খাওয়াদাওয়ার ব্য়বস্থাও। সেই খরচটাই বাসের টিকিটের ওই টাকার মধ্যেই যুক্ত থাকত। তাই ছিল আস্ত বড় একটা ডাইনিং রুমও।
আরও পড়ুন, ফের পারদ চড়ল শহরে, উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা
বিনোদনেরও বিপুল আয়োজন করে রেখেছিল 'অ্যালবার্ট'। রেডিও এবং মিউজিকেরও এলাহি ব্য়বস্থা ছিল। বাসের মধ্য়ে ছিল শরীর গরম রাখার জন্য ফ্য়ান হিটার। তবে পৃথিবীর মধ্যে এটাই ছিল তখন বাস পরিষেবার সবচেয়ে দীর্ঘতম রুট।
সেন্ট্রাল ওয়েস্টার্ন ডেইলি-র তথ্য অনুসারে, ২১ বছরের অনুগত পরিষেবার পরে অস্ট্রেলিয়ায় দুর্ঘটনার সম্মুখিন হয়েছিল একটি বাস। এরপর তা যাত্রীদের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। অ্যান্ডি স্টুয়ার্ট নামে এক ব্রিটিশ, যিনি বাড়ি ফেরার উপায় খুঁজছিলেন। তিনি ১৯৬৮ সালের মে মাসে সিডনিতে বাসটি কিনে নেন এবং বাসের ভিতরে কাঠামোর আমূল পরিবর্তন করেন। অ্যান্ডি কার্যত এই বাসটিকে একটা চলমান লাক্সারি বাড়ি-র আকার দেন। তাঁর উদ্দেশ ছিল সিডনি থেকে বাস নিয়ে লন্ডনে বাড়িতে পৌঁছবেন। বাসটি সংস্কারের সময় যাত্রীদের বসার জায়গায় মোট ১৩ লাক্সারি ইউনিট তৈরি করিয়েছিলেন অ্যান্ডি। রুট হিসাবে বেছেথিলেন সিডনি টু কলকাতা এবং তারপর সোজা লন্ডন।
সিডনি থেকে ভায়া কলকাতা হয়ে লন্ডন-এর রাস্তার দূরত্ব ছিল ১৬ হাজার কিলোমিটারের সামান্য কিছু বেশি। হাইরোড অফ ওজি নামে অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ১৯৬৮ সালের৮ অক্টোবর সিডনির মার্টিন প্লেসের জিপিও-র সামনে থেকে এই বাসের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৩২ দিন পরে কলকাতা হয়ে অ্যালবার্ট প্রথম যখন লন্ডনে পা রাখে, তারিখটা ছিল ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯।
হাই রোড ফর অজি-র দাবি অনুযায়ী, ৪,৫,৬, ৭, ৮ এবং নম্বর ট্রিপ ছিল লন্ডন থেকে সিডনি। মাঝে হল্ট বাস স্টপ কলকাতা। দাবি অনুযায়ী, ১২, ১৩,১৪ ও ১৫ নম্বর ট্রিপ হয়েছিল লন্ডন থেকে কলকাতার মধ্যে।
কলকাতা থেকে লন্ডনের মধ্য়ে যাতায়াতে সময় লাগত ৪৯দিন। ১৯৭২ সালের ২৫ জুলাই অ্যালবার্ট কলকাতার উদ্দেশ যাত্রা শুরু করেছিল। কলকাতায় যখন অ্যালবার্ট এসে থামে, সেদিন তারিখটা ছিল ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭২। অ্যালবার্ট তার এই যাত্রা পথে ১৫০টি সীমান্ত পার করত। কিন্তু, কোনওদিনই তাকে নিয়ে সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে কোনও বিতর্ক হয়নি। বরং অ্যালবার্ট তারা বিশ্বের দূত হিসাবে পরিচয় দিত।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকলের পরও কোভিড জয়ী ৫৪-র দুধ ব্যবসায়ী, শহরকে দিলেন এক সমুদ্র আত্মবিশ্বাস
কোভিড রোগী ফেরালেই লাইসেন্স বাতিল, হাসপাতালগুলিকে হুঁশিয়ারি রাজ্য়ের
কলকাতায় একদিনে চিহ্নিত প্রায় ২০০ বাড়ি, কনটেইনমেন্ট জোন বৃদ্ধির কারণ বললেন মুখ্যসচিব
করোনা আক্রান্ত নিজাম প্যালেসের এক সিবিআই আধিকারিক, স্যানিটাইজ করা হল পুরো অফিস
করোনা আবহে সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের প্রাক্তন স্ত্রী-শাশুড়ির দেহ উদ্ধার, তদন্তে পুলিশ
দেহ রাখার জায়গা না থাকায় ডিপ ফ্রিজ বসছে মেডিকেলের মর্গে, মৃতদেহ 'ম্যানেজমেন্ট'-এ নিয়োগ অ্যাসি